কম্পিউটারের কার্যপদ্ধতি
কম্পিউটার আধুনিক প্রযুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এটি তথ্য গ্রহণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং আউটপুট প্রদানে সক্ষম একটি যন্ত্র। কম্পিউটারের কার্যপদ্ধতি বুঝতে হলে জানতে হয় এটি কীভাবে কাজ করে, কোন ধাপে ধাপে তথ্য প্রসেসিং হয় এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন উপাদান কীভাবে একসাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে।
১. তথ্য গ্রহণ (Input)
কম্পিউটারের প্রথম ধাপ হলো তথ্য বা ডেটা গ্রহণ। এটি ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যেমন—কীবোর্ড, মাউস, স্ক্যানার, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা ইত্যাদি।
ব্যবহারকারী যেকোনো ধরনের তথ্য বা নির্দেশ ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারে পাঠায়। এই ধাপে তথ্য ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তরিত হয় যাতে CPU বুঝতে পারে।
২. তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ (Processing)
প্রাপ্ত তথ্য CPU-তে পাঠানো হয়, যেখানে মূল প্রক্রিয়াজাতকরণ ঘটে। CPU বা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটকে বলা হয় কম্পিউটারের মস্তিষ্ক। এটি বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গঠিত:
২.১ কন্ট্রোল ইউনিট (Control Unit – CU)
কন্ট্রোল ইউনিট কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ইনপুট থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা বুঝে CPU-র অন্যান্য অংশকে সঠিক সময়ে কাজ করতে বলে। CU প্রোগ্রাম নির্দেশনার ক্রম অনুসারে কাজ পরিচালনা করে।
২.২ অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট (ALU)
ALU হল গাণিতিক ও যৌক্তিক অপারেশন সম্পাদনের ইউনিট। এটি যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ সহ বিভিন্ন গণনা করে এবং তুলনা, লজিক্যাল অপারেশনও করে থাকে।
২.৩ রেজিস্টার
রেজিস্টার হলো CPU-র মধ্যে ক্ষণস্থায়ী তথ্য সংরক্ষণকারী ছোট ছোট মেমোরি ইউনিট। এটি গতি বাড়ায় কারণ CPU তাত্ক্ষণিক তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারে।
২.৪ প্রোগ্রাম কাউন্টার
প্রোগ্রাম কাউন্টার নির্দেশনা মেমোরির ঠিকানা ধরে রাখে, যাতে CPU পরবর্তী নির্দেশনা পড়তে পারে।
৩. মেমোরি ইউনিট (Memory Unit)
মেমোরি হলো তথ্য ও নির্দেশনা সংরক্ষণের স্থান। এটি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত:
৩.১ প্রাইমারি মেমোরি (Primary Memory)
- RAM (Random Access Memory): সাময়িক তথ্য সংরক্ষণ করে, কম্পিউটার চালু থাকা অবস্থায় সক্রিয় থাকে।
- ROM (Read Only Memory): স্থায়ী তথ্য সংরক্ষণ করে, যেমন বুটিং নির্দেশনা।
৩.২ সেকেন্ডারি মেমোরি (Secondary Memory)
হাড্ডিস্ক, এসএসডি, ইউএসবি ড্রাইভের মতো ডিভাইস যা তথ্য দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ করে।
৪. আউটপুট (Output)
প্রক্রিয়াজাত তথ্য ব্যবহারকারীর কাছে আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। উদাহরণস্বরূপ—মনিটর, প্রিন্টার, স্পিকার ইত্যাদি। আউটপুট ডিভাইস তথ্যকে মানুষের বুঝার উপযোগী রূপে রূপান্তর করে।
৫. স্টোরেজ (Storage)
কম্পিউটার প্রক্রিয়াজাত তথ্য সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য। স্টোরেজ মেমোরি তথ্য হারানোর সম্ভাবনা কমায় এবং তথ্য পুনরায় ব্যবহার সম্ভব করে।
৬. কার্যপ্রণালী (Execution Cycle)
কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী মূলত একটি চক্রের মাধ্যমে চলে, যাকে বলা হয় ফেচ-ডিকোড-এক্সিকিউট (Fetch-Decode-Execute) চক্র।
৬.১ ফেচ (Fetch)
CPU প্রোগ্রাম কাউন্টারের নির্দেশানুসারে মেমোরি থেকে নির্দেশনা (Instruction) সংগ্রহ করে।
৬.২ ডিকোড (Decode)
প্রাপ্ত নির্দেশনাটি কন্ট্রোল ইউনিট দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়। এখানে বুঝা হয় কী কাজ করতে হবে।
৬.৩ এক্সিকিউট (Execute)
ALU বা অন্যান্য অংশ নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করে।
এই চক্র অবিরত চলতে থাকে যতক্ষণ প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ হয়।
৭. বাইনারি কোড ও মেশিন ভাষা
কম্পিউটার বাইনারি (০ ও ১) ভিত্তিক তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে। সফটওয়্যার প্রোগ্রাম সাধারণত উচ্চ স্তরের ভাষায় লেখা হলেও, কম্পিউটার সেটিকে মেশিন ভাষায় (বাইনারি) রূপান্তর করে কাজ করে।
৮. অপারেটিং সিস্টেম (Operating System)
অপারেটিং সিস্টেম হলো সফটওয়্যার যা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের মধ্যে সংযোগস্থাপন করে। এটি হার্ডওয়্যার রিসোর্স নিয়ন্ত্রণ করে, মাল্টিটাস্কিং, ফাইল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কাজ করে।
৯. উদাহরণস্বরূপ কার্যপদ্ধতি
ধরা যাক, আপনি কীবোর্ড থেকে একটি সংখ্যা ইনপুট দিলেন এবং তার দ্বিগুণ বের করতে চান।
- ইনপুট ডিভাইস সংখ্যা গ্রহণ করে।
- CU নির্দেশনা গ্রহণ করে এবং CPU-কে বলে গুণ করতে।
- ALU সংখ্যাটি দ্বিগুণ করে।
- ফলাফল মেমোরিতে সংরক্ষণ হয়।
- আউটপুট ডিভাইস ফলাফল প্রদর্শন করে।
১০. সামগ্রিক কার্যপ্রণালীর সারসংক্ষেপ
১. তথ্য গ্রহণ → ২. নির্দেশনা গ্রহণ → ৩. নির্দেশনা বিশ্লেষণ → ৪. গণনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ → ৫. তথ্য সংরক্ষণ → ৬. ফলাফল প্রদর্শন।
উপসংহার
কম্পিউটারের কার্যপদ্ধতি বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে তথ্যের ধারাবাহিক ও দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করে। আধুনিক কম্পিউটার উচ্চ গতির প্রসেসর, উন্নত মেমোরি ও সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে জটিল সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে সক্ষম। এই কার্যপ্রণালী প্রযুক্তি ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
https://www.munshiacademy.com/কম্পিউটারের-কার্যপদ্ধতি/