🌿 ভূমিকা
বাংলাদেশের ইতিহাস, লোককথা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য মিশেল দেখা যায় হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কমলারাণীর দীঘিতে। লোকমুখে প্রচলিত আছে, রাজা বড়লের প্রিয় রানি কমলারাণীর স্মৃতিতে খনন করা হয়েছিল এই বিশাল দীঘি। সময়ের সাক্ষী হয়ে আজও এটি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে রাখে। শান্ত জলের আয়নায় চারপাশের প্রকৃতি প্রতিফলিত হয়ে যেন এক চিরন্তন গল্প বলে যায়।
📍 কোথায়
কমলারাণীর দীঘি (বা সাগরদীঘি) অবস্থিত হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায়, হবিগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মানবসৃষ্ট জলাধার।
🌸 কেন যাবেন
- ইতিহাস ও লোককথার সঙ্গে যুক্ত এই দীঘি আপনাকে নিয়ে যাবে অতীতে।
- প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক স্বপ্নের স্থান — নীল আকাশ, সবুজ ঘাস, আর দীঘির জলে দিগন্তজোড়া শান্তি।
- বিকেলের আলোয় দীঘির জলে সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যিই মোহময়।
- ফটোগ্রাফি, পিকনিক, অথবা নিভৃতে বসে প্রকৃতি উপভোগ—সবকিছুর জন্য আদর্শ জায়গা।
🕰️ কখন যাবেন
ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে মার্চ। শীতকালে আবহাওয়া মনোরম থাকে, দীঘির পানি স্বচ্ছ হয় এবং আশপাশের প্রকৃতি থাকে প্রাণবন্ত। বর্ষাকালেও এর সৌন্দর্য অন্য রূপে ধরা দেয়, তবে চলাচলে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
🧭 কীভাবে যাবেন (রুট স্টেপ বাই স্টেপ)
- ঢাকা → হবিগঞ্জ সদর
- পরিবহন: শ্যামলী, হানিফ, Ena, বা অগ্রদূত বাসে সরাসরি হবিগঞ্জ পর্যন্ত (ভাড়া প্রায় ৪০০–৫০০ টাকা)।
- সময় লাগবে প্রায় ৫–৬ ঘণ্টা।
- হবিগঞ্জ সদর → বানিয়াচং
- লোকাল সিএনজি/অটোরিকশায় (ভাড়া ৬০–৮০ টাকা)।
- সময় লাগবে প্রায় ২৫–৩০ মিনিট।
- বানিয়াচং বাজার → কমলারাণীর দীঘি
- রিকশা বা হাঁটাপথে সহজেই পৌঁছানো যায়।
👀 কী দেখবেন
- দীঘির বিস্তৃত জলরাশি ও তীরবর্তী প্রাচীন স্থাপনার নিদর্শন।
- স্থানীয়দের বর্ণনায় প্রচলিত কমলারাণীর কিংবদন্তি।
- আশপাশের সবুজ মাঠ, পাখির কূজন, এবং নৌকায় করে দীঘি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
- সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য—দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।
💰 খরচ
- ঢাকায় থেকে পুরো দিন ঘুরে ফিরতে আনুমানিক খরচ: ৮০০–১২০০ টাকা প্রতি ব্যক্তি (যাতায়াতসহ)।
- স্থানীয় খাবার ও চা-নাস্তার খরচ: ৫০–২০০ টাকা।
🚌 পরিবহন ব্যবস্থা
- বাসে বা প্রাইভেট কারে হবিগঞ্জ যাওয়া যায়।
- স্থানীয় অটোরিকশা, মোটরবাইক, বা নৌকা ব্যবহার করা যায় দীঘির চারপাশ ঘোরার জন্য।
🍴 খাওয়ার ব্যবস্থা
বানিয়াচং বাজারে সহজলভ্য খাবার হোটেল আছে। হবিগঞ্জ শহরে চাইলে ভালো মানের রেস্তোরাঁ যেমন Hotel Sonar Bangla, Panshi Restaurant ইত্যাদিতেও খাওয়া যেতে পারে।
☎️ যোগাযোগ
- স্থানীয় পর্যটন তথ্য অফিস: হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন অফিস, হবিগঞ্জ।
- যেকোনো স্থানীয় গাইড পাওয়া যায় বানিয়াচং বাজারে।
🏠 আবাসন ব্যবস্থা
- হবিগঞ্জ শহরে রয়েছে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল:
- Hotel River View
- Hotel Sonar Bangla
- Hotel Jahan
প্রতি রাতের ভাড়া প্রায় ৮০০–২০০০ টাকা।
✨ দৃষ্টি আকর্ষণ
- দীঘির পাড়ে ময়লা-আবর্জনা না ফেলুন।
- স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
- সাঁতার কাটতে নামলে নিরাপত্তা বজায় রাখুন, কারণ দীঘির গভীরতা অনেক।
⚠️ সতর্কতা
- বর্ষাকালে রাস্তা কাদাময় হয়, তাই স্লিপ প্রতিরোধী জুতা পরা ভালো।
- সন্ধ্যার পর এলাকাটি নির্জন হয়ে যায়, একা ঘোরা পরামর্শযোগ্য নয়।
🌄 আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- বানিয়াচং বড় মসজিদ
- রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ
- হবিগঞ্জের চা বাগান এলাকা
- রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
💡 ভ্রমণ টিপস
- সকালে রওনা দিন যেন দিনের আলোয় পুরো এলাকা ঘোরা যায়।
- নিজের পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
- ড্রোন বা ক্যামেরা নিলে আগে স্থানীয় অনুমতি নিন।
- গ্রুপে গেলে স্থানীয় নৌকা ভাড়া করে দীঘি ঘুরলে অভিজ্ঞতা হবে দুর্দান্ত।
