🐢🦌🪶 কচ্ছপ, হরিণ ও কাঠঠোকরা
এক ছিল সবুজে ভরা এক গভীর বন। সেই বনে বাস করত এক কচ্ছপ, এক হরিণ আর এক কাঠঠোকরা। তিন বন্ধু প্রতিদিন বিকেলে জলাশয়ের ধারে বসে গল্প করত, হাসত, খেলত। তাদের বন্ধুত্ব ছিল অটুট — একে অপরের প্রতি ছিল সীমাহীন ভালোবাসা।
একদিন সকালে হরিণটি খাবারের সন্ধানে একটু দূরে চলে গেল। সেখানে গাছের নিচে ঘাস খেতে খেতে সে হঠাৎ পা তুলে ফেলল—“ছ্যাঁক!” শব্দ করে পা আটকে গেল শিকারীর পাতা জালে। মুহূর্তেই সে বুঝল—বিপদে পড়েছে! যতই ছটফট করে, ততই জাল শক্ত হয়। ভয় আর অসহায়তায় হরিণের চোখে জল চলে এলো।
জঙ্গলের অন্যপ্রান্তে কচ্ছপ তখন ধীরে ধীরে হাঁটছিল। হরিণের আর্তচিৎকার শুনে সে দৌড়ে (অবশ্য তার নিজের গতিতে!) চলে এল। এসে দেখে—প্রিয় বন্ধু জালে আটকা পড়ে কাঁদছে। কচ্ছপ একটুও দেরি না করে নিজের দাঁত দিয়ে জাল কাটতে শুরু করল। ধীরে ধীরে জাল দুর্বল হতে লাগল, কিন্তু সময় তো লাগেই কচ্ছপের কাজে!
ঠিক তখনই দেখা গেল—শিকারী লোকটি দূর থেকে এগিয়ে আসছে। হাতে তার ধনুক, চোখে কূটচাল। হরিণ আর কচ্ছপ বুঝতে পারল, আর কিছু সময়ের মধ্যেই বিপদ আসবে।
তখনই তাদের তৃতীয় বন্ধু, কাঠঠোকরা, গাছের ডালে বসে সব কিছু দেখছিল। সে এক মুহূর্তও দেরি করল না। তীব্র গতিতে উড়ে গিয়ে সোজা শিকারীর টাকলা মাথায় ঠোকর মারতে শুরু করল — ঠক! ঠক! ঠক!
শিকারী ব্যথায় ছটফট করতে লাগল, হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরল, চোখে জল এসে গেল তার। সে দিশেহারা হয়ে ধনুক ফেলে দৌড়ে পালিয়ে গেল বন থেকে।
এদিকে কচ্ছপের দাঁতের কাটা জাল তখন প্রায় ছিঁড়ে গেছে। কাঠঠোকরার আক্রমণের সুযোগে কচ্ছপ হরিণকে পুরোপুরি মুক্ত করে দিল। হরিণ উঠে দাঁড়িয়ে কচ্ছপকে জড়িয়ে ধরল, আনন্দে চোখে জল এসে গেল তার।
তিন বন্ধু আবার একসাথে ফিরে গেল জলাশয়ের ধারে। সূর্যাস্তের কোমল আলোয় তারা বসে গল্প করল—
হরিণ বলল, “আজ যদি তোমরা না থাকতে, তবে আমি বেঁচে ফিরতাম না।”
কচ্ছপ মুচকি হেসে বলল, “বন্ধুত্ব মানেই তো একে অপরের বিপদে পাশে থাকা।”
কাঠঠোকরা ঠোকর মারার ভঙ্গিতে হেসে বলল, “আমার ঠোকর না থাকলে কিন্তু বিপদ মিটত না!”
সবাই হাসল। বনের হাওয়া যেন আরও মিষ্টি হয়ে উঠল তাদের বন্ধুত্বের গল্পে।
✨ নৈতিক শিক্ষা:
সত্যিকারের বন্ধু বিপদে পাশে থাকে। ঐক্য ও সাহস একসাথে থাকলে যেকোনো বিপদ জয় করা যায়।
