এ বি এম মূসা
জন্ম: ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১, ফুলগাজী থানা, ফেনী
মৃত্যু: ৯ এপ্রিল ২০১৪ (বয়স ৮৩), ঢাকা
পেশা: সাংবাদিক, সম্পাদক, কলামিস্ট
জাতীয়তা: বাংলাদেশী
নাগরিকত্ব: বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক
সন্তান: নাসিম মূসা
জীবনী
এ বি এম মূসা (২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ – ৯ এপ্রিল ২০১৪) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাংবাদিক, সম্পাদক ও কলামিস্ট। দীর্ঘ ছয় দশক সাংবাদিকতা করেছেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা বলার জন্য পরিচিত ছিলেন এবং সাংবাদিক সমাজে তাঁর অবদানকে গুরুজনের মতো গণ্য করা হয়।
প্রারম্ভিক জীবন
এ বি এম মূসা জন্মগ্রহণ করেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার (বর্তমানে ফুলগাজী উপজেলা) দক্ষিণ ধর্মপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।
সাংবাদিকতা জীবন
১৯৫০ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। একই বছরে পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। তিনি রিপোর্টার, স্পোর্টস রিপোর্টার ও বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় সরকারের প্রভাবশালী পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ হলেও তিনি সংবাদকর্ম চালিয়ে যান।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দিন থেকেই মর্নিং নিউজ পত্রিকা ও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চারবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধ ও ভূমিকা
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিবিসি ও সানডে টাইমসের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে রণাঙ্গন থেকে সংবাদ প্রেরণ করতেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিটিভির মহাব্যবস্থাপক এবং মর্নিং নিউজের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতি
রাজনীতি তার প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল না। পাকিস্তান আমলে ১৯৭০-এর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফেনী আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না, তবে আওয়ামী লীগের প্রতি তার সমর্থন ছিল।
জাতিসংঘ ও পরবর্তি কর্মজীবন
১৯৭৮ সালে তিনি ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমে (ESCAP) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মৃত্যুর পূর্ববর্তী বছরগুলোতে তিনি টেলিভিশন টক-শোতে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সরকারের কর্মকাণ্ড সমালোচনা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
মৃত্যু
৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে ঢাকা শহরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগে ভুগেছেন। মরদেহের প্রথম জানাজা মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে ফেনীতে কবরস্থাপিত হন।
প্রকাশনা
তিনি রচনা করেছেন মুজিব ভাই নামের একটি বই, যা ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। বইটিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বর্ণনা রয়েছে। এছাড়া তিনি একটি আত্মজীবনী রচনা করেছিলেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
- একুশে পদক (প্রাপ্তির বছর উল্লেখযোগ্য)
তথ্যসূত্র
- “চলে গেলেন এবিএম মূসা”, প্রথম আলো, ১০ এপ্রিল ২০১৪
- “এবিএম মূসার প্রয়াণ”, প্রথম আলো, ১০ এপ্রিল ২০১৪
- “একজন স্পষ্টবাদী সাংবাদিক এবিএম মূসা”, ১৪ এপ্রিল ২০১৪
- “গ্রন্থালোচনা: মুজিব ভাই”, যায়যায়দিন, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭