এম এ  ওয়াজেদ মিয়া: আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

Spread the love

এম এ  ওয়াজেদ মিয়া: আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

ভূমিকা
বাংলাদেশের বিজ্ঞান জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। তিনি শুধুমাত্র একজন খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী নন, বরং একজন দেশপ্রেমিক, গবেষণাবিদ, এবং প্রগতিশীল চিন্তাবিদ হিসেবেও পরিচিত। তাঁর গবেষণা ও কর্মজীবন বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিকাশে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেছে।

জন্ম ও শিক্ষা

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী ফতেপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরমাণু পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন

ড. ওয়াজেদ মিয়া পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন (১৯৮৮-১৯৯১)।

প্রধান গবেষণার ক্ষেত্রসমূহঃ

  • পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার
  • রেডিওআইসোটোপ ও নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের ব্যবহার
  • ইলেকট্রন স্পেকট্রোস্কোপি
  • সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস প্রযুক্তি
  • নিউক্লিয়ার ইনস্ট্রুমেন্টেশন

তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে বহু গবেষণাপত্র এবং প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে স্থান পেয়েছে।

প্রকাশিত গ্রন্থ ও লেখালেখি

ড. ওয়াজেদ মিয়া একজন লেখক হিসেবেও পরিচিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো:

  • “বাংলাদেশে পরমাণু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি”
  • “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ”

এইসব গ্রন্থে তিনি একদিকে যেমন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, তেমনি অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিও বিশ্লেষণ করেছেন।

সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা

তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী। তবে, তিনি সবসময় নিজেকে বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত করতে পছন্দ করতেন এবং রাজনীতির বাইরে থেকেই জাতির কল্যাণে অবদান রাখেন। তাঁর লেখা ও বক্তব্যে বিজ্ঞানমনস্কতা ও বাস্তববাদী চিন্তার প্রতিফলন ঘটে।

পুরস্কার ও সম্মাননা

তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন, যেমন:

  • একুশে পদক (মরণোত্তর, ২০০৯) – বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য
  • বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের আজীবন সদস্য পদ
  • জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মাননা ও স্বীকৃতি

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে তাঁর পৈতৃক বাড়ি পীরগঞ্জে সমাহিত করা হয়। মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে “ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তাঁর অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

উপসংহার

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ, লেখক ও মানবপ্রেমিক। বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি উন্নয়নে তাঁর দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা আজও স্মরণীয়। তাঁর অবদান শুধু একটি বিজ্ঞানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তি গড়ে তোলার একজন রূপকার। তাঁর কর্মজীবন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমুখী চিন্তা ও গবেষণার অনুপ্রেরণা জোগাবে।

 

এম এ  ওয়াজেদ মিয়া: আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *