🌿 আসাদ চৌধুরী: একজন মননশীল কবি ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার

📌 পরিচিতি
আসাদ চৌধুরী (১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ – ৫ অক্টোবর ২০২৩) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশি কবি, সাহিত্যিক, অনুবাদক ও গবেষক। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা ও শিক্ষাক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
👪 জন্ম ও বংশপরিচয়
আসাদ চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন উলানিয়া জমিদার বাড়িতে, যা তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাকেরগঞ্জ জেলার (বর্তমান বরিশাল) মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। তিনি জন্মসূত্রে উলানিয়ার চৌধুরী বংশের সন্তান, যা একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার হিসেবে পরিচিত।
তার পূর্বপুরুষ শায়খ মহম্মদ আসাদ আলী পারস্য থেকে অযোধ্যা হয়ে বাংলার মুর্শিদাবাদে আসেন। তাঁর নাতির ঘরের নাতি মহম্মদ হানিফ ছিলেন সুবাহদার শায়েস্তা খাঁর অন্যতম সেনানায়ক এবং গোবিন্দপুরের সংগ্রাম কেল্লার জমাদার। হানিফ পরবর্তীতে বরিশালের তেঁতুলিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।
হানিফের বংশধর মহম্মদ তকি উলানিয়ায় বসতি গড়ে তোলেন। তার পুত্র হাসন রাজা ছিলেন আসাদ চৌধুরীর পরদাদা, যিনি ব্যবসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে লালগঞ্জ, আলিগঞ্জ ও কালিগঞ্জ বন্দরের প্রতিষ্ঠাতা হন এবং ইদিলপুর জমিদারী গড়ে তোলেন।
বংশলতিকা:
আসাদ চৌধুরী ইবনে মহম্মদ আরিফ চৌধুরী
ইবনে এছলাম চৌধুরী
ইবনে মজিদ চৌধুরী
ইবনে হাসন রাজা
ইবনে মহম্মদ তকি
তার মাতার নাম: সৈয়দা মাহমুদা বেগম
স্ত্রীর নাম: সাহানা বেগম
🎓 শিক্ষাজীবন
- ১৯৫৭ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পাস করেন।
- ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক।
- এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
• স্নাতক (সম্মান): ১৯৬৩
• স্নাতকোত্তর: ১৯৬৪
🧑🏫 কর্মজীবন
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা শেষ করার পর তিনি শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
- 📍 ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে শিক্ষকতা করেন (১৯৬৪–১৯৭২)
- পরে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যসম্পাদনার কাজে যুক্ত হন
- ১৯৮৫–১৯৮৮: ভয়েস অব জার্মানি-র বাংলাদেশ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন
- দীর্ঘকাল বাংলা একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন
→ অবশেষে পরিচালক পদে থেকে অবসর নেন
🏅 পুরস্কার ও সম্মাননা
- 🏵️ বাংলা একাডেমি পুরস্কার – ১৯৮৭
- 🏵️ একুশে পদক – ২০১৩
আসাদ চৌধুরী তার সাহিত্য, শিক্ষকতা ও সাংস্কৃতিক কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিন্তা-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার রচিত কবিতা ও গ্রন্থসমূহ যুগের চেতনা ও মানবিকতা তুলে ধরেছে। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য উচ্চতা, যিনি সাহিত্যে এবং সমাজে একসাথে প্রজ্ঞা, মমতা ও কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন।
📚 সাহিত্যকর্ম ও অবদান:
✍️ প্রকাশিত গ্রন্থ
কবিতা
- তবক দেওয়া পান (১৯৭৫)
- বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬)
- প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬)
- জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২)
- যে পারে পারুক (১৯৮৩)
- মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪)
- মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫)
- আমার কবিতা (১৯৮৫)
- ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫)
- প্রেমের কবিতা (১৯৮৫)
- দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭)
- নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২)
- টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭)
- বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮)
- বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮)
- কবিতা-সমগ্র (২০০২)
- কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩)
- ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬)
প্রবন্ধ-গবেষণা
- কোন অলকার ফুল (১৯৮২)
শিশুসাহিত্য
- রাজার নতুন জামা (রূপান্তর, ১৯৭৯)
- রাজা বাদশার গল্প (১৯৮০)
- গ্রাম বাংলার গল্প (১৯৮০)
- ছোট্ট রাজপুত্র (অনুবাদ : ১৯৮২)
- গর্ব আমার অনেক কিছুর (১৯৯৬)
- ভিন দেশের মজার লোককাহিনী (১৯৯৯)
- তিন রসরাজের আড্ডা (১৯৯৯)
- কেশবতী রাজকন্যা (২০০০)
- গ্রাম বাংলা আরো গল্প (২০০০)
- তোমাদের প্রিয় চার শিল্পী (জীবনী, ২০০০)
- জন হেনরি (আমেরিকার লোককাহিনী, ২০০১)
- মিকালেঞ্জেনো (জীবনী, ২০০১)
- ছোটদের মজার গল্প (২০০১)
- সোনার খড়ম (২০০৬)
- মুচি-ভ’তের গল্প (২০০৬)
জীবনী
- সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু (১৯৮৩)
- রজনীকান্ত সেন (১৯৮৯)
- স্মৃতিসত্তায় যুগলবন্দী (২০০১)
ইতিহাস
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৩)
অনুবাদ
- বাড়ির কাছে আরশিনগর : বাংলাদেশের উর্দু কবিতা (২০০০)
- প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদী কবিতা (২০০৫)
সম্পাদনা
- যাদের রক্তে মুক্ত এদেশ (১৯৯১ যুগ্মভাবে)
- ছয়টি রূপকথা (১৯৭৯)
পুরস্কার ও সম্মাননা
-
- আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫)
- অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২)
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৭)
- শম্ভুগঞ্জ এনায়েতপুরী স্বর্ণপদক (১৯৯৯)
- ত্রিভুজ সাহিত্য পুরস্কার
- বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক
- অশ্বনী কুমার পদক (২০০১)
- জীবনানন্দ দাশ পদক
- অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক
- জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৬)
- বঙ্গবন্ধু সম্মাননা ১৪১৮
- একুশে পদক (২০১৩
- শব্দভূমি আজীবন সাহিত্য সম্মাননা (২০১৮)
📝
উক্তি:
“তখন সত্যি মানুষ ছিলাম, এখন আছি অল্প।”