🕰️ আলী আমজদের ঘড়ি
অবস্থান: সুরমা নদীর তীর, কীন ব্রিজের নিচে, সিলেট, বাংলাদেশ
নকশাকার: নওয়াব আলী আহমদ
ধরন: ঘড়িঘর (Clock Tower)
উপাদান: টিন ও লোহা
প্রস্থ: ৫.১ মিটার (১৬.৭ ফুট)
উচ্চতা: ৭.৪ মিটার (২৪.৩ ফুট)
নির্মাণকাল: ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দ
নিবেদিত: নওয়াব আলী আমজদ
🏛️ পরিচিতি
আলী আমজদের ঘড়ি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ঘড়িঘর, যা সিলেট শহরের সুরমা নদীর ডানপাশে, কীন ব্রিজের নিচে অবস্থিত। এটি ১৮৭৪ সালে সিলেটের জমিদার নওয়াব আলী আহমদ খান তাঁর পুত্র আলী আমজদের নামে নির্মাণ করেন। ঘড়িটি টিন ও লোহার তৈরি সুউচ্চ টাওয়ারের উপরে স্থাপিত একটি বিশাল ঘড়ি, যার ডায়ামিটার প্রায় আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটার দৈর্ঘ্য দুই ফুট।
📍 অবস্থান ও নির্মাণ ইতিহাস
সিলেট শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার কীন ব্রিজের ডানপাশে সুরমা নদীর তীরে ঘড়িঘরটি অবস্থিত। ঊনবিংশ শতকে, যখন দেশে আধুনিক ঘড়ির প্রচলন সীমিত ছিল, তখন এই ঘড়িঘরটি তৈরি হয় স্থানীয় জনগণকে সময় জানানোর জন্য।
স্থাপত্যশৈলীতে এটি গম্বুজ আকৃতির এবং ঢেউটিনে নির্মিত। লোহার খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই টাওয়ারটি সিলেটের ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
⚙️ মেরামত ও পুনরুদ্ধার
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের গোলার আঘাতে ঘড়িঘরটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর সিলেট পৌরসভা ঘড়িটি মেরামত করে পুনরায় সচল করে, কিন্তু কিছুদিন পর ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তী সময়ে—
- ১৯৮৭ সালে: ঘড়িটি ঢাকার একটি কোম্পানির সহায়তায় রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থায় চালু করা হয়।
- পরবর্তীতে: সিজান কোম্পানির মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে চালু করা হলেও তা স্থায়ী হয়নি।
- ২০১১ সালে: সিলেট সিটি কর্পোরেশন পুনরায় ঘড়িটি মেরামত করে এবং বর্তমানে এটি প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা সচল রয়েছে।
🕰️ স্থানীয় প্রবাদ
আলী আমজদের ঘড়িকে কেন্দ্র করে সিলেট অঞ্চলে একটি জনপ্রিয় প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে—
“চাঁদনী ঘাটের সিড়ি, আলী আমজদের ঘড়ি, জিতু মিয়ার বাড়ি, বঙ্কু বাবুর দাড়ি।”
এই প্রবাদটি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলোর প্রতীক হিসেবে প্রচলিত।
🌆 সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
আলী আমজদের ঘড়ি শুধু একটি স্থাপনা নয়— এটি সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সময়চেতনার এক জীবন্ত সাক্ষী। বর্তমানে এটি পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান এবং সিলেট শহরের প্রতীকী স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত।
