আয় দেখে যা নাচ
সুফিয়া কামাল

নদীর পানি ছলছলায়
খোকন সোনা কলকলায়
গাঙের ইলিশ মাছ-
বলে ডেকে খোকন মণি
আয় দেখে যা নাচ
#বেগম_সুফিয়া_ কামাল (১৯১১–১৯৯৯)
বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি, লেখিকা, নারীবাদী এবং নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।
জন্ম ও পরিবার
২০শে জুন ১৯১১ সালে বরিশালের শায়েস্তাবাদে নানার বাড়িতে জন্ম। তার পিতৃকুল ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিলাউরের সৈয়দ বংশ এবং মাতৃকুল নবাব পরিবার। শৈশব কেটেছে মায়ের সঙ্গে নানাবাড়িতে। পরিবারে বাংলা শিক্ষার চল না থাকলেও মায়ের উৎসাহে নিজে বাংলা শেখেন।
বিয়ে ও শিক্ষা
১১ বছর বয়সে বিয়ে হয় মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে, যিনি সাহিত্য ও সমাজসেবায় তাকে উৎসাহ দেন। বেগম রোকেয়ার সংস্পর্শে এসে নারীমুক্তি ভাবনায় প্রভাবিত হন।
সাহিত্যচর্চা ও কর্মজীবন
১৯২৬ সালে ‘বাসন্তী’ কবিতা দিয়ে সাহিত্যজগতে প্রবেশ। ১৯৩৮ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ সাঁঝের মায়া প্রকাশিত হয়। শিক্ষকতা, সম্পাদনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সমাজসেবায় সক্রিয় ছিলেন। তার সাহিত্যকর্মে নারীর অধিকার, মানবতা ও প্রগতির চেতনা প্রবলভাবে প্রতিফলিত।
রাজনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকা
ভাষা আন্দোলন, নারী অধিকার, ছায়ানট, মহিলা পরিষদ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালেও তিনি ছিলেন সাহসী অবস্থানে।
গুরুত্বপূর্ণ রচনাসমূহ
- সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, উদাত্ত পৃথিবী (কবিতা)
- কেয়ার কাঁটা (গল্প), একালে আমাদের কাল (আত্মজীবনী), একাত্তরের ডায়েরি (স্মৃতিকথা)
পুরস্কার ও সম্মাননা
তিনি ৫০টির বেশি পুরস্কারে ভূষিত হন। উল্লেখযোগ্য:
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২)
- একুশে পদক (১৯৭৬)
- স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৭)
- বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬)
মৃত্যু ও স্মরণ
২০শে নভেম্বর ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হন—এ সম্মান পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি নারী। তাঁর অবদান স্মরণে প্রতি বছর নানা কর্মসূচি পালিত হয়।