আমার পথ
কাজী নজরুল ইসলাম
একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি – বাংলা সাহিত্যপাঠ
কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ “আমার পথ” থেকে এইচএসসি পরীক্ষার উপযোগী ৩০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নোত্তর (MCQ) দেওয়া হলো:
📘 বহুনির্বাচনী প্রশ্নোত্তর (MCQ):
১. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের লেখক কে?
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ) কাজী নজরুল ইসলাম ✅
গ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ঘ) জসীমউদ্দীন
২. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে লেখক কাকে কর্ণধার হিসেবে দেখেছেন?
ক) সমাজকে
খ) ঈশ্বরকে
গ) নিজেকে ✅
ঘ) গুরুজনকে
- “আমি আমার সত্যকে নমস্কার জানাই”— এ বাক্যে ‘সত্য’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে—
ক) ধর্মীয় মূল্যবোধ
খ) ব্যক্তিগত বিশ্বাস ✅
গ) সামাজিক নিয়ম
ঘ) ঐতিহ্য - কাজী নজরুল ইসলামের মতে, মানুষ কাকে ভয় পায়?
ক) সত্যকে
খ) ধর্মকে
গ) মিথ্যাকে ✅
ঘ) অন্যায়কে - “যার ভিতরে ভয়, সেই…”— বাক্যটি পূর্ণ করো।
ক) সবকিছু জয় করতে পারে
খ) বাইরে ভয় পায় ✅
গ) কখনও সাহসী হতে পারে না
ঘ) নিজের সত্যকে চিনে - লেখকের মতে, সত্যচ্যুতি ঘটে—
ক) ভয় ও ভণ্ডামির ফলে ✅
খ) আত্মবিশ্বাসের ফলে
গ) অহংকারের ফলে
ঘ) জ্ঞানের অভাবে - লেখক ‘অহংকার’ শব্দটিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
ক) নেতিবাচক দৃষ্টিকোণে
খ) মিথ্যার রূপে
গ) দম্ভের ইতিবাচক রূপে ✅
ঘ) ধর্মীয় বিচারে - লেখকের মতে ‘মিথ্যা বিনয়’—
ক) শ্রদ্ধার প্রকাশ
খ) ভদ্রতার চিহ্ন
গ) দুর্বলতা ✅
ঘ) অহংকারের রূপ - “নিজেকে চেনা মানেই”—
ক) নিজেকে ঘৃণা করা
খ) আত্মবিশ্বাস অর্জন ✅
গ) সমাজবিরোধিতা
ঘ) বিনয় শেখা - লেখক আত্মনির্ভরতা শেখার কথা কাদের কাছ থেকে বলেছেন?
ক) রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে
খ) গান্ধীজির কাছ থেকে ✅
গ) নেতাজির কাছ থেকে
ঘ) স্বামী বিবেকানন্দের কাছ থেকে - “গান্ধীজি আছেন” কথাটি লেখকের মতে প্রকাশ করে—
ক) ঈমান
খ) পরাবলম্বন ✅
গ) নেতৃত্ব
ঘ) শোক - লেখকের মতে, দেশের পরাধীনতার মূল কারণ—
ক) দারিদ্র্য
খ) অন্য ধর্ম
গ) পরাবলম্বন ✅
ঘ) প্রযুক্তির অভাব - কোন ধর্মকে লেখক সর্বোচ্চ বলেছেন?
ক) ইসলাম
খ) হিন্দু
গ) মানুষ-ধর্ম ✅
ঘ) প্রকৃতি - লেখক কিসের মাধ্যমে মিথ্যাকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন?
ক) জল
খ) আগুন ✅
গ) ছুরি
ঘ) ভালোবাসা - ‘আগুনের শিখা’ নিভে যায় কিসে?
ক) ভয়
খ) সত্য
গ) মিথ্যার জল ✅
ঘ) বাতাস - লেখকের মতে, ভুলের মধ্য দিয়েই কী পাওয়া যায়?
ক) ঈশ্বর
খ) সত্য ✅
গ) অহংকার
ঘ) ধর্ম - “নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে…”— বাক্যটি বোঝায়:
ক) আত্মবিশ্বাসের শিক্ষা
খ) কর্মবিমুখতা ✅
গ) ধর্মীয় দায়িত্ব
ঘ) আত্মনির্ভরতা - লেখক কাকে প্রশংসা লাভের জন্য ভণ্ডামি করতে রাজি নন?
ক) গুরুজন
খ) জনতা
গ) পাঁচ জনের ✅
ঘ) আত্মীয় - ‘দম্ভ’ লেখকের মতে কী ফল আনে?
ক) ধ্বংস
খ) পতন
গ) আত্মপ্রবঞ্চনা
ঘ) পুরুষত্ব ✅ - লেখকের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় দাসত্ব কোনটি?
ক) বাইরের দাসত্ব
খ) পরাবলম্বনের দাসত্ব ✅
গ) ধর্মীয় দাসত্ব
ঘ) জাতিভেদের দাসত্ব - “নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস”— লেখকের মতে তা আসে—
ক) ধর্মচর্চা থেকে
খ) আত্মচেতনা থেকে ✅
গ) রাজনৈতিক আন্দোলনে
ঘ) গুরু উপদেশে - লেখকের ‘পথ’ বলতে বোঝায়—
ক) ভ্রমণ
খ) নৈতিক দিকনির্দেশনা ✅
গ) জীবনের দুর্ভোগ
ঘ) ঐতিহ্যের পথ - লেখক কার ‘বাণী’কে চোখ বুজে মানেন না?
ক) গুরুর
খ) মন্ত্রীর
গ) মহাপুরুষের ✅
ঘ) কবির - লেখকের ‘আগুনের সম্মার্জনা’ বলতে বোঝায়—
ক) ধ্বংস
খ) শক্তি
গ) শুদ্ধি ✅
ঘ) বিদ্বেষ - ‘নিজেকে চেনা’ কী শেখায়?
ক) আত্মমর্যাদা ✅
খ) আত্মপ্রবঞ্চনা
গ) আত্মকেন্দ্রিকতা
ঘ) অহংকার - “আমি যদি সত্যি করে আমার সত্যকে চিনে থাকি”— লেখকের বিশ্বাস এখানে প্রকাশ পায়—
ক) ধর্মে
খ) নিজের উপর ✅
গ) গুরুর উপর
ঘ) রাষ্ট্রে - লেখকের মতে, বড় ভুল কোনটি?
ক) সত্যকে মেনে চলা
খ) মিথ্যার প্রতি বিনয় দেখানো ✅
গ) নিজের সত্যকে প্রকাশ করা
ঘ) প্রশ্ন করা - লেখকের পথ কোন পথে চলে?
ক) ধর্মীয় পথে
খ) বিপ্লবের পথে
গ) সত্যের পথে ✅
ঘ) সাহিত্যপথে - লেখকের মতে কাকে ভুল বলে মনে করলেও তা ভালো?
ক) অহংকার ✅
খ) বিনয়
গ) ভয়
ঘ) মিথ্যা - কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি মূলত কিসের উপর ভিত্তি করে রচিত?
ক) ধর্মীয় শিক্ষা
খ) রাজনৈতিক বক্তব্য
গ) আত্মোপলব্ধি ও সত্যচেতনা ✅
ঘ) ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ
📖 প্রবন্ধ: আমার পথ — কাজী নজরুল ইসলাম
📌 শব্দার্থ:
শব্দ | অর্থ |
---|---|
কর্ণধার 🚢 | নেতা বা পথপ্রদর্শক |
সালাম জানানো 🙏 | শ্রদ্ধা নিবেদন করা |
বিপথ ❌ | ভুল বা পথভ্রষ্ট পথ |
পদানত 🧎 | পরাধীন, মাথা নত করা |
কাণ্ডারি 🛶 | নৌকার চালক; নির্দেশক |
দম্ভ 💪 | আত্মবিশ্বাসযুক্ত অহংকার |
বিনয় 🤲 | নম্রতা |
পৌরুষ 🧔 | সাহস, দৃঢ়তা |
অভিশাপ-রথ ⚡ | দুঃখদায়ক জীবনযাত্রা |
অবিনয় 😐 | বিনয়ের অভাব |
পরাবলম্বন 🪢 | অন্যের উপর নির্ভরতা |
স্বাবলম্বন 🏋️ | আত্মনির্ভরতা |
ভণ্ডামি 🎭 | ভান, মিথ্যা আচরণ |
সম্মার্জনা 🔥 | শুদ্ধিকরণ |
শিখা 🔥 | আগুনের আলো বা জ্যোতি |
✍️ টীকা (ব্যাখ্যা সহ মন্তব্য):
🔹 “আমি আমার কর্ণধার আমি”—
→ লেখক আত্মনির্ভরতার কথা বলছেন। তিনি নিজেই নিজের পথ ঠিক করবেন। এতে লেখকের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা প্রকাশ পায়।
🔹 “আমার সত্যকে নমস্কার করছি”—
→ তিনি কোনো বাহ্যিক শক্তি নয়, নিজের সত্য, আত্মবোধ ও চিন্তাকেই সর্বোচ্চ বলে মনে করেন।
🔹 “রাজভয়—লোকভয় কোনো ভয়ই আমায় বিপথে নিয়ে যাবে না”—
→ লেখক দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে তিনি কারো চাপ বা ভয় দেখিয়ে সত্যচ্যুত হবেন না।
🔹 “যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়”—
→ ভেতরে যদি সত্য থাকে, বাইরের কোনো ভয় তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না—এই আত্মবিশ্বাস লেখক জোর দিয়ে বলেন।
🔹 “নিজকে চিনলে মানুষ কাউকে কুর্নিশ করে না”—
→ আত্মবোধে পরিপূর্ণ ব্যক্তি কারো অন্ধ অনুসারী হয় না। এটি লেখকের আত্মমর্যাদার ইঙ্গিত।
🔹 “দম্ভ নয়, আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি”—
→ লেখকের বক্তব্য: নিজের অবস্থান স্পষ্টভাবে বলা অহংকার নয়, বরং আত্মচেতনার প্রকাশ।
🔹 “মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে দম্ভের পৌরুষ ভালো”—
→ এখানে লেখক সাহসী উচ্চারণের পক্ষে, যা সমাজের ভণ্ড বিনয়ের বিপরীতে সত্য প্রতিষ্ঠা করে।
🔹 “আমি আমার আগুনের শিখা নিভতে দেব না”—
→ লেখক সত্যের প্রতীক হিসেবে আগুনের শিখার কথা বলেন, যা কেবল মিথ্যাই নিভাতে পারে।
🔹 “গান্ধীজি আছেন” বলার বদলে “আমি আছি”—
→ গান্ধীজির আত্মনির্ভরতার শিক্ষা উপেক্ষা করে আমরা তাকেই ভরসা করি, যা প্রকৃত শিক্ষা নয়।
🔹 “পরাবলম্বনই আমাদের সবচেয়ে বড় দাসত্ব”—
→ অন্যের উপর নির্ভরতা আমাদের মানসিকভাবে পরাধীন করে তোলে।
🔹 “মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম”—
→ হিন্দু-মুসলমান বিভেদের ঊর্ধ্বে লেখক মানুষ হিসেবে মিলন ও মানবধর্মের উপর জোর দেন।
🔹 “আগুনের সম্মার্জনা প্রয়োজন”—
→ দেশের মিথ্যা ও ভণ্ডামিকে দূর করতে আগুনের মতো সত্য ও সাহসিকতার প্রয়োজন।
🔹 📌 প্রবন্ধের সারাংশ (Summary):
‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম আত্মসচেতনতা, সত্যনিষ্ঠা ও আত্মনির্ভরতার চেতনাকে সামনে এনেছেন। লেখক মনে করেন, একজন মানুষের নিজের সত্যবোধই তার পথপ্রদর্শক। সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক—কোনো কিছুই যদি তার নিজস্ব সত্যবোধের বিরোধিতা করে, তবে সেই পথ ত্যাজ্য।
তিনি ভণ্ড বিনয়, অন্ধ অনুসরণ ও অন্যের উপরে নির্ভর করাকে দাসত্ব মনে করেন। তিনি বলেন, সত্য চিনে নিলে ভয় থাকে না, এবং ভয়হীন জীবনই স্বাধীনতার পূর্বশর্ত।
প্রবন্ধের শেষাংশে নজরুল হিন্দু-মুসলমানের মিলন, মানবধর্ম ও দেশমুক্তির জন্য শুদ্ধ সত্যচেতনা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। এটি একটি স্পষ্ট, স্পর্ধিত ও জাগরণমুখী রচনা।
📖 📜 বিশেষ উক্তি (Important Quotations):
- “আমার কর্ণধার আমি।”
➤ আত্মনির্ভরতা ও নেতৃত্বের স্পষ্ট ঘোষণা। - “রাজভয়—লোকভয় কোনো ভয়ই আমায় বিপথে নিয়ে যাবে না।”
➤ সাহসিকতা ও সত্যবাদিতার পরিচায়ক। - “যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়।”
➤ অন্তর থেকে ভয়মুক্ত হলেই মানুষ মুক্তচিন্তায় চলতে পারে। - “মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে দম্ভের পৌরুষ অনেক-অনেক ভালো।”
➤ সাহসী ও সৎ অবস্থানের পক্ষে শক্তিশালী বক্তব্য। - “মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।”
➤ নজরুলের অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদের ঘনীভূত প্রকাশ।
⭐ বিশেষ দিকসমূহ (Key Highlights):
🔹 ১. আত্মনির্ভরতার বাণী:
লেখক আত্মবিশ্বাসের উপর জোর দেন—নিজেকে চেনা ও নিজের সত্যকে মেনে চলাই মানুষের পথ হওয়া উচিত।
🔹 ২. প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর:
প্রথাবদ্ধ ভণ্ডামি ও মেকি বিনয়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ।
🔹 ৩. সাহস ও সত্যনিষ্ঠা:
সত্যকে ভালোবেসে জীবনে দৃঢ়তা গড়ে তুলতে হবে—এই বার্তা লেখকের বক্তব্যকে শক্ত ভিত দেয়।
🔹 ৪. মহাত্মা গান্ধী প্রসঙ্গ:
গান্ধীর আত্মনির্ভরতার আদর্শকে স্মরণ করে, লেখক তার প্রকৃত শিক্ষাকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ জাতির সমালোচনা করেন।
🔹 ৫. অসাম্প্রদায়িক চিন্তা:
ধর্মকে নয়, মানুষকেই মূল ধর্মরূপে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব।
🔹 ৬. জাতীয়তা ও স্বাধীনতা চেতনা:
লেখক নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতার বদলে মানসিক-আত্মিক মুক্তির কথা বলেন।
✅ শিক্ষার্থীদের জন্য উপসংহার:
এই প্রবন্ধটি শুধু সাহিত্যের দিক থেকে নয়, চিন্তা ও চরিত্র গঠনের জন্যও শিক্ষণীয়। এতে একাধারে রয়েছে:
- সাহসের বার্তা
- সত্যের চর্চা
- মানবধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি
- এবং দেশমুক্তির যথার্থ পথনির্দেশ।
ক্লাসের ব্যাখার জন্য ভিডিয়ো দেখুন।