✍️ আবু রুশদ: বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত গল্পকার ও ঔপন্যাসিক
আবু রুশদ
📌 পরিচিতি
আবু রুশদ (২৫ ডিসেম্বর ১৯১৯ – ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও অধ্যাপক। বাংলা সাহিত্যে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, আদমজী সাহিত্য পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা লাভ করেছেন।
🎓 প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
আবু রুশদ ১৯১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি হুগলীর মহসীন কলেজে ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিটার কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ, ঢাকা কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, রাজশাহী কলেজ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
🏛️ সরকারি কর্মজীবন ও দায়িত্ব
আবু রুশদ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক ইন্সট্রাকশন (ডিপিআই) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি লন্ডনের হাইকমিশনে শিক্ষা কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৮২ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
⚔️ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিকা
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়, তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে পাকিস্তান দূতাবাসে শিক্ষা ও সংস্কৃতি কাউন্সেলরের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন। ‘বাংলাদেশ মিশন ওয়াশিংটন’ নামক সংগঠন গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুজিবনগর সরকারের পক্ষে ‘বাংলাদেশ নিউজলেটার’ নামক সাপ্তাহিক প্রকাশনার দায়িত্বে ছিলেন।
📚 সাহিত্যিক কর্ম
আবু রুশদের সাহিত্য কর্ম বহুমুখী। তার প্রথম প্রকাশনা ছিল ১৯৩৯ সালে ছোটগল্পের একটি সংকলন। তিনি ছয়টি উপন্যাস, ৫০টি ছোটগল্প এবং তিন খণ্ডের আত্মজীবনী রচনা করেছেন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় অনুবাদে দক্ষ ছিলেন। বিশেষত শেক্সপিয়ারের কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেন। ১৯৬৪ সালে তার ‘লালনের গান’ নামক অনুবাদ সংকলন বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি নিয়মিত কয়েকটি বাংলাদেশী সংবাদপত্রে সাহিত্য ও সামাজিক কলাম লিখতেন।
📖 উল্লেখযোগ্য উপন্যাসসমূহ
- এলোমেলো (১৯৪৬)
- সামনে নতুন দিন (১৯৫১)
- ডোবা হলো দীঘি (১৯৬০)
- নগর (১৯৬৩)
- অনিশ্চিত রাগিনী (১৯৬৯)
- স্থগিত দ্বীপ (১৯৭৪)
🏆 পুরস্কার ও সম্মাননা
- তঘমা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬৩)
- বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৯৬)
- হাবিব ব্যাংক পুরস্কার (১৯৭০)
- একুশে পদক (১৯৮১)
- আদমজী সাহিত্য পুরস্কার
- নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৯২)
- অলক্তা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯২)
- বাংলা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৩)
- শেরে বাংলা পুরস্কার (১৯৯২)
- লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯২)
- রোটারী ক্লাব পুরস্কার (১৯৯৫)
- চট্টগ্রাম সংস্কৃতি কেন্দ্র ফারুখ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৯)
👪 ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু
আবু রুশদ আজিয়া রুশদকে বিবাহ করেছিলেন। তার ভাই রশীদ করীমও একজন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ছিলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তিনি ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
🔚 উপসংহার
আবু রুশদ বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট মনীষী, যিনি গল্প, উপন্যাস ও অনুবাদের মাধ্যমে সাহিত্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। শিক্ষাবিদ, লেখক এবং মুক্তিযুদ্ধের কর্মী হিসেবে তার অবদান বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয়।