🖋️ আবদুশ শাকুর: এক বহুমাত্রিক প্রতিভা

🎓 প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ ও গোলাপ প্রেমিক – এক নামেই যিনি অমর।
বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আবদুশ শাকুর। তিনি শুধু লেখকই নন—তিনি একাধারে গবেষক, রম্যরচনাকার, সঙ্গীত বিশারদ, এবং গোলাপের অনন্য সাধক। তাঁর রচনায় যেমন থাকে তীক্ষ্ণ মনন, তেমনি থাকে রস ও সৌন্দর্যের অপূর্ব মিশেল। আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর জীবন ও কাজের বিস্তৃত পরিচয়।
👶 জন্ম ও শৈশব
- 📍 ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১, রামেশ্বরপুর, সুধারাম, নোয়াখালী
- 👪 পিতা: মকবুল আহমাদ | মাতা: ফায়জুন্নিসা
- ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ
🎓 শিক্ষা ও কর্মজীবন
- কামিল পাস: ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা
- ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও এম.এ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- উন্নয়ন অর্থনীতিতে এম.এস.: ISS, নেদারল্যান্ডস (১৯৮০)
📌 পেশাগত জীবন শুরু করেন অধ্যাপক হিসেবে। পরে যুক্ত হন পাকিস্তানের সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসে এবং অবশেষে বাংলাদেশ সরকারের সচিব হিসেবে কর্মজীবন শেষ করেন ২০০০ সালে।
📚 সাহিত্যকর্মের বৈচিত্র্য
আবদুশ শাকুরের সাহিত্য মানে গভীরতা, সৌন্দর্য, রসবোধ আর প্রজ্ঞার এক অনন্য মিশেল।
📖 কথাসাহিত্য:
- উপন্যাস: ভালোবাসা, ক্রাইসিস, সংলাপ, উত্তর-দক্ষিণ সংলাপ
- গল্পগ্রন্থ: গল্পসমগ্র, আঘাত, ধস, শারীর, এপিটাফ
😂 রম্যরচনা:
- ভেজাল বাঙালি, মধ্যবিত্তের কড়চা, রম্যসমগ্র
📢 রম্যরচনার আড়ালে তিনি উপস্থাপন করেন চেতনার উচ্চতর আলো।
📘 গবেষণা:
- সঙ্গীত সঙ্গীত, মহান শ্রোতা, বাঙালির মুক্তির গান
- মহামহিম রবীন্দ্রনাথ, পরম্পরাহীন রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথকে যতটুকু জানি
- গোলাপসংগ্রহ, গোলাপনামা – বাংলায় প্রথম গোলাপভিত্তিক বিশদ গবেষণা
✍️ আত্মজীবনী:
- কাঁটাতে গোলাপও থাকে (১ম, ২য়, ৩য় খণ্ড)
🌹 গোলাপ ও আবদুশ শাকুর
তিনি শুধু লিখতেন না, নিজ হাতে গোলাপ চাষ করতেন। তাঁর লনে ও ছাদে ছিল:
- 🔹 ৩৫০ প্রকার গোলাপের ৭৫০টি গুল্ম
- 🏅 বাংলাদেশ জাতীয় গোলাপ সমিতি স্বর্ণপদক (১৯৮৯)
📖 তাঁর বই গোলাপসংগ্রহ বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যেখানে গোলাপের চাষ, ইতিহাস, সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পর্যন্ত রয়েছে।
🎵 সঙ্গীতের সাধক
আবদুশ শাকুর নিজেই ছিলেন এক সঙ্গীতজ্ঞ ও গায়ক।
তাঁর লেখায় পাওয়া যায়:
- হিন্দুস্তানি বনাম কর্ণাটক সঙ্গীতের তুলনা
- সুর ও শব্দের নান্দনিক বিশ্লেষণ
- রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল – সবাইকে নতুন আলোয় দেখা
📚 বই: সঙ্গীত সঙ্গীত, মহান শ্রোতা, সঙ্গীত সংবিৎ
🎤 ড. করুণাময় গোস্বামীর মতে:
“শাকুর সঙ্গীতকে বোঝেন ভেতর থেকে – শ্রবণ, দর্শন ও চিন্তার অপূর্ব সংমিশ্রণ তাঁর রচনায়।”
🖼️ রবীন্দ্র গবেষণা
রবীন্দ্রনাথকে তিনি বলতেন “পরিব্যক্তি”— এক প্রকার স্রষ্টার আকস্মিক সৃষ্টি।
তাঁর লেখায় রবীন্দ্রনাথকে দেখা হয়েছে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে, যেমন:
- মহামহিম রবীন্দ্রনাথ
- রবীন্দ্রনাথকে যতটুকু জানি
- চিরনতুন রবীন্দ্রনাথ
📌 সাহিত্য, সংগীত, শিক্ষা ও দর্শন—সব জায়গায় কবিগুরুকে ছুঁতে চেয়েছেন তিনি এক নতুন বিশ্লেষণাত্মক ভাষায়।
🏆 পুরস্কার ও সম্মাননা
পুরস্কার | বছর | দেশ |
---|---|---|
বাংলা একাডেমি পুরস্কার | ১৯৭৯ | বাংলাদেশ |
অমিয় ভূষণ পুরস্কার | ২০০৩ | ভারত |
প্রথম আলো বর্ষসেরা বই | ২০০৪ | বাংলাদেশ |
অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার | ২০০৮ | বাংলাদেশ |
একুশে পদক (মরণোত্তর) | ২০১৪ | বাংলাদেশ |
⚰️ মৃত্যু
- 📅 ১৫ জানুয়ারি ২০১৩
- 🏡 মৃত্যুকাল: ধানমণ্ডি, নিজ বাসভবন
- ⚰️ সমাধিস্থ: মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান
✅ উপসংহার
🎇 আবদুশ শাকুর ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী – যিনি একই সাথে সাহিত্য, সংগীত, গবেষণা এবং প্রকৃতির প্রতি অনুরাগে সমান পারদর্শী।
“তাঁর ভাষা যেন ক্ষুরধার বুদ্ধির দীপ্ত প্রকাশ। রম্যরচনার ছায়ায় তিনি জাগিয়ে তুলেছেন উচ্চতর চিন্তার আলো।”
— আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
🔗 তাঁর প্রতিটি বই পাঠকের কাছে শুধু একটি লেখা নয়, একটি অনন্য অভিজ্ঞতা।
https://www.munshiacademy.com/আবদুশ-শাকুর-জীবন-ও-সাহিত্/