আত্মবিলাপ কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (MCQ)
১. ‘আত্মবিলাপ’ কবিতার রচয়িতা কে?
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত ✅
গ) জীবনানন্দ দাশ
ঘ) সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
২. ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় মূলত কী প্রকাশ পেয়েছে?
ক) প্রকৃতির সৌন্দর্য
খ) প্রেমের উচ্ছ্বাস
গ) আত্মসমালোচনার বেদনাবোধ ✅
ঘ) স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা
৩. ‘আশার ছলনে ভুলি কী ফল লভিনু’— এই চরণে কবি কোন বিষয়ের প্রতি আক্ষেপ করেছেন?
ক) বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতা
খ) অমূল্য সময় নষ্ট করা ✅
গ) দুঃস্বপ্ন দেখা
ঘ) রাজনীতি
৪. ‘দিন দিন আয়ুহীন হীনবল দিন দিন’— চরণে কবি বোঝাতে চেয়েছেন—
ক) সময় অপচয়ের মর্মান্তিকতা ✅
খ) অর্থের অভাব
গ) দেহের সৌন্দর্য
ঘ) প্রেমের ভঙ্গ
৫. ‘নীর বিন্ধু, দূর্বা দলে’— এখানে ‘নীর’ অর্থ কী?
ক) আলো
খ) পানি ✅
গ) প্রেম
ঘ) অশ্রু
৬. ‘অম্বুবিম্ব’ শব্দের অর্থ কী?
ক) জলধারা
খ) শিশির বিন্দু ✅
গ) বাষ্প
ঘ) রক্তফোঁটা
৭. ‘মরীচিকা’ শব্দটি কোন দৃশ্যের ইঙ্গিত দেয়?
ক) বিশুদ্ধতা
খ) অলীক আকাঙ্ক্ষা ✅
গ) গভীর প্রেম
ঘ) বাস্তবতা
৮. ‘মরুদেশে তৃষাক্লেশে’— কোথায় মরীচিকা দেখা যায়?
ক) নদীতে
খ) পাহাড়ে
গ) মরুভূমিতে ✅
ঘ) আকাশে
৯. ‘প্রেমের নিগড় গড়ি’— এখানে ‘নিগড়’ শব্দের অর্থ—
ক) বন্ধন ✅
খ) আগুন
গ) আশা
ঘ) মৃত্যু
১০. ‘কালফাঁদে’ পতঙ্গের মতো কবি কিসে ধাবিত হয়েছেন?
ক) প্রেমে ✅
খ) যশে
গ) বিত্তে
ঘ) ঈর্ষায়
১১. ‘বাকি কি রাখিলি তুই বৃথা অর্থ অন্বেষণে’— কোন বিষয়ের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে?
ক) জ্ঞান
খ) ধর্ম
গ) অর্থলোভ ✅
ঘ) বন্ধুত্ব
১২. ‘ক্ষত মাত্ত হাত’ কেন হয়েছে?
ক) তীব্র আগুনে
খ) মৃণাল-কণ্টকে কমল তুলতে গিয়ে ✅
গ) প্রেমে ব্যর্থ হয়ে
ঘ) অর্থ হারিয়ে
১৩. ‘দঃশিল কেবল ফণী’— এখানে ‘ফণী’ কী বোঝায়?
ক) ময়ূর
খ) সাপ ✅
গ) চন্দ্র
ঘ) কাঁটা
১৪. ‘যশোলাভ লোভে আয়ু কত যে ব্যয়িলি’— এখানে কবি কী নিয়ে অনুতপ্ত?
ক) প্রেম
খ) যশলোভ ✅
গ) ঈর্ষা
ঘ) ধন
১৫. ‘মাৎসর্য-বিষদশন’ মানে—
ক) বিষধর সাপের কামড়ের মতো হিংসা ✅
খ) বিষের পান
গ) বেদনাদায়ক প্রেম
ঘ) ঈর্ষাহীনতা
১৬. ‘মুকুতা-ফলের লোভে ডুবে রে অতল জলে’— কোন মানবপ্রবৃত্তি বোঝানো হয়েছে?
ক) আত্মদান
খ) সাহস
গ) লোভ ✅
ঘ) ত্যাগ
১৭. ‘শতমুক্তাধিক আয়ু’— এখানে ‘শতমুক্তা’ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
ক) অশ্রু
খ) সময়ের মূল্য ✅
গ) প্রেম
ঘ) জ্ঞান
১৮. কবি নিজের জীবনকে তুলনা করেছেন—
ক) সফল অভিযাত্রীর সঙ্গে
খ) মূর্খ পতঙ্গের সঙ্গে ✅
গ) প্রেমিকের সঙ্গে
ঘ) বীরযোদ্ধার সঙ্গে
১৯. ‘অবোধ মন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ক) অপরিণত এবং লোভী মন ✅
খ) প্রেমময় মন
গ) আত্মদায়ী মন
ঘ) সৎচরিত্র মন
২০. ‘আত্মবিলাপ’ কবিতাটি কোন ঘরানার অন্তর্ভুক্ত?
ক) প্রকৃতিপ্রেমমূলক
খ) ভাবগম্ভীর আত্ম-অনুশোচনামূলক ✅
গ) প্রেমময়
ঘ) দেশপ্রেমমূলক
📝 রচনামূলক প্রশ্ন (২টি) ও উত্তর
প্রশ্ন ১:
‘আত্মবিলাপ’ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের আত্ম-অনুশোচনা কীভাবে ফুটে উঠেছে— আলোচনা কর।
ভূমিকা:
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের একজন প্রগতিশীল ও যন্ত্রণাদগ্ধ কবি। তাঁর আত্মজীবনের বেদনা, দুঃখ, ব্যর্থতা, হতাশা ও আত্মঅনুশোচনার স্বর আমরা অনুভব করি ‘আত্মবিলাপ’ কবিতায়। এটি একটি সাম্য ও জীবনমুখী কবিতা, যেখানে কবি নিজের জীবনকে মূল্যায়ন করেছেন তীব্র আত্মসমালোচনার দৃষ্টিতে।
🔶 আত্ম-অনুশোচনার প্রকাশ
🔸 ১. আশাভঙ্গ ও হতাশার স্বীকারোক্তি
কবিতা শুরুতেই কবি প্রশ্ন করেন নিজের মনের কাছে—
“আশার ছলনে ভুলি কী ফল লভিনু, হায়,
তাই ভাবী মনে?”
এখানে কবি জীবনের ভ্রান্ত আকাঙ্ক্ষা, মায়া ও অলীক স্বপ্নের পিছনে ছুটে সময় হারানোর জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, আশার ছলনা তাকে ধোঁকা দিয়েছে এবং এর কোনো ফল লাভ হয়নি।
🔸 ২. সময় ও যৌবনের অপচয়ের বেদনা
কবি তার ক্ষয়মান জীবন এবং যৌবনের অপচয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন—
“দিন দিন আয়ুহীন হীনবল দিন দিন,—
তবু এ আশার নেশা ছুটিল না?”
এখানে আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে তিনি উপলব্ধি করছেন, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় তিনি ভুল পথে ব্যয় করেছেন এবং সময়ের অপচয়ের কারণে আজ তিনি শূন্য।
🔸 ৩. অন্ধ প্রেমে পতনের অনুশোচনা
কবি প্রেমে অন্ধ হয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন, সে উপলব্ধি তুলে ধরেন এইভাবে—
“প্রেমের নিগড় গড়ি পরিলি চরণে সাদে
কী ফল লভিলি?”
এই চরণে কবি প্রশ্ন করছেন—যে প্রেমের শৃঙ্খল নিজেই গড়েছিল, তা তাকে কী ফল দিয়েছে? এটি স্পষ্ট করে যে কবি তার প্রেমজীবনের জন্য অনুতপ্ত।
🔸 ৪. অর্থলোভ ও যশলিপ্সার প্রতি ঘৃণা
কবির আত্ম-অনুশোচনার সবচেয়ে গভীর স্তর প্রকাশ পায় যশ ও অর্থলোভের প্রসঙ্গে—
“যশোলাভ লোভে আয়ু কত যে ব্যয়িলি হায়,
কব তা কাহারে?”
“বাকি কি রাখিলি তুই বৃথা অর্থ-অন্বেষণে,
সে সাধ সাধিতে?”
এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি যশ, খ্যাতি এবং সম্পদের পেছনে ছুটতে গিয়ে জীবনের আসল সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি এখন এ অর্থহীন সাধনার জন্য নিজেকে তীব্রভাবে দোষারোপ করছেন।
🔸 ৫. মরীচিকার পিছনে ছোটা— এক অসার্থক যাত্রা
কবি তার জীবনকে মরীচিকার পেছনে ছুটে চলা এক মরুদ্যান হিসেবে চিত্রিত করেছেন—
“মরীচিকা মরুদেশে, নাশে প্রাণ তৃষাক্লেশে—
এ তিনের ছল সম ছল রে এ কু-আশার।”
এখানে ‘মরীচিকা’, ‘তৃষা’ ও ‘আশা’— তিনটি উপমার মাধ্যমে কবি প্রমাণ করছেন যে তিনি ভুল আকাঙ্ক্ষা ও মোহের দিকে ধাবিত হয়েছিলেন, যার ফল শুধু ক্ষয়, বেদনা ও শূন্যতা।
🔶 কবিতায় প্রতীক ও চিত্রকল্পে আত্ম-অনুশোচনার রূপ
🔸 পতঙ্গের প্রতীক:
“জ্বলন্ত-পাবক-শিখা-লোভে তুই কালফাঁদে
উড়িয়া পড়িলি।”
কবি নিজেকে এক অন্ধ পতঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যে আলোর মোহে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুড়ে মরে। এখানেও আত্মবিলাপ ও অনুশোচনার গভীর রূপ ফুটে ওঠে।
🔸 ফণী ও মণি:
“নারিলি হরিতে মণি, দঃশিল কেবল ফণী
এ বিষম বিষজ্বালা ভুলিবি, মন, কেমনে!”
কবির লোভ তাকে সঠিক রত্ন (মূল্যবান বিষয়) অর্জন থেকে বিরত রেখেছে। বরং তিনি বিষাক্ত সাপ (ভ্রান্ত আকর্ষণ)-এর ফণীই ধারণ করেছেন, যার কারণে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করছেন।
🔶 উপসংহার:
‘আত্মবিলাপ’ কবিতাটি এক দুঃখ ভারাক্রান্ত আত্মজিজ্ঞাসা। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এ কবিতায় নিজের ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত, মোহ, প্রেম, লোভ, যশপিপাসা এবং সময় নষ্ট করার জন্য নিজেকেই অভিযুক্ত করেছেন। কবির এই কবিতা শুধু আত্মপ্রত্যয়ের দলিল নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক গভীর সতর্কবার্তাও।
কবি বারবার নিজেকে ধিক্কার দিয়ে প্রশ্ন করেছেন—
“হায় রে, ভুলিবি কত আশার কুহক-ছলে!”
এই চরণেই কবিতার সারসংক্ষেপ নিহিত। এটি নিছক আত্মবিলাপ নয়—এটি এক আত্মবিশ্লেষণমূলক জীবন দর্শনের প্রকাশ।
https://www.munshiacademy.com/আত্মবিলাপ-কবিতার-বহুনির্/