আছরাঙ্গা দীঘি, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট

আছরাঙ্গা দীঘি, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট


ভূমিকা

বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন হলো প্রাচীন দীঘিগুলো। এসব দীঘি কেবল পানির উৎসই নয়, বরং বহু ইতিহাস, লোককাহিনি ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির ধারক। তেমনই একটি ঐতিহাসিক ও সৌন্দর্যবাহী দীঘি হলো আছরাঙ্গা দীঘি, যা অবস্থিত জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামে। এটি স্থানীয়দের কাছে পরিচিত একটি দর্শনীয় স্থান।


কোথায় অবস্থিত

আছরাঙ্গা দীঘি অবস্থিত রসুলপুর ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামে, ক্ষেতলাল উপজেলা, জয়পুরহাট জেলা, রাজশাহী বিভাগ


কেন যাবেন

  • শত বছরের পুরনো দীঘির ইতিহাস জানতে
  • গ্রামের নিস্তব্ধ, সবুজ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে
  • পিকনিক, ছবি তোলা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য
  • লোককথা ও গ্রামীণ সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে
  • স্বল্প বাজেটে একটি চমৎকার দিন কাটাতে

কখন যাবেন

শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) এবং বসন্তকাল (ফাল্গুন-চৈত্র) আছরাঙ্গা দীঘি ঘুরে দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তখন আবহাওয়া আরামদায়ক এবং প্রকৃতিও থাকে জীবন্ত রূপে।


কীভাবে যাবেন / রুট (স্টেপ বাই স্টেপ)

  1. ঢাকা → জয়পুরহাট:
    • গাবতলী বা কল্যাণপুর থেকে বাসে জয়পুরহাট
    • অথবা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে জয়পুরহাট
  2. জয়পুরহাট → ক্ষেতলাল উপজেলা:
    • লোকাল বাস বা সিএনজিতে
  3. ক্ষেতলাল → মামুদপুর (আছরাঙ্গা দীঘি):
    • অটো, রিকশা বা মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার করে পৌঁছানো যায়
    • স্থানীয়ভাবে সবাই “আছরাঙ্গা দীঘি” চেনে

কি দেখবেন

  • দীঘির বিশাল জলরাশি ও তার স্বচ্ছ জল
  • চারপাশের গাছগাছালি ও প্রকৃতি
  • দীঘির পাড়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য
  • স্থানীয় শিশুদের সাঁতার ও জলক্রীড়া
  • পাখিদের কলকাকলি ও দীঘির কোলঘেঁষা কৃষিজমি

খরচ (প্রায়):

খরচের খাত আনুমানিক খরচ (প্রতি ব্যক্তি)
ঢাকা → জয়পুরহাট (বাস/ট্রেন) ৳৫০০–৳৭০০
জয়পুরহাট → মসমুদপুর ৳২০০–৳৩০০
খাওয়া-দাওয়া ৳৩০০
মোট খরচ ৳১০০০–৳১৩০০

খাওয়ার ব্যবস্থা

  • জয়পুরহাট ও ক্ষেতলাল শহরে অনেক রেস্টুরেন্ট আছে
  • স্থানীয় বাজারে চা-নাশতা ও হালকা খাবার মিলবে
  • পিকনিক বা দলবদ্ধ ভ্রমণে গেলে নিজের খাবার সঙ্গে নেওয়াই উত্তম

যোগাযোগ

  • জয়পুরহাট পর্যটন অফিস/জেলা প্রশাসন
  • ক্ষেতলাল উপজেলা প্রশাসন
  • রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদ
  • স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা নিতে পারেন

আবাসন ব্যবস্থা

  • জয়পুরহাট শহরে রয়েছে সাধারণ মানের হোটেল যেমন:
    • Hotel Khan
    • Hotel Al-Madina
  • ক্ষেতলালে রাত্রিযাপন ব্যবস্থা সীমিত, তবে দিনে যাওয়া ও ফিরে আসা সম্ভব

দৃষ্টি আকর্ষণ

  • দীঘির বিশালতা ও নির্মল পরিবেশ
  • গ্রামের ঐতিহ্যবাহী চিত্র
  • জলে প্রতিফলিত নীল আকাশ ও সূর্যের আলো
  • পাখিদের অবাধ বিচরণ

সতর্কতা

  • জলে নামা থেকে বিরত থাকুন (বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে)
  • পরিবেশে ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না
  • উচ্চ শব্দে গান বা স্পিকার ব্যবহার পরিহার করুন
  • স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখান

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

  • ক্ষেতলাল জমিদার বাড়ি
  • জয়পুরহাট শহরের মুকুন্দপুর বৌদ্ধ বিহার
  • কালাই উপজেলার কিছু দীঘি
  • পাঁচবিবির প্রাচীন নিদর্শন
  • ধান ও গমের বিস্তৃত ক্ষেত (মৌসুমি সৌন্দর্য)

টিপস

  • সকালে বের হলে দিনভর ঘোরা সম্ভব
  • শুকনো খাবার, ছাতা ও ক্যামেরা সঙ্গে নিন
  • শিশু ও বয়স্কদের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করুন
  • স্থানীয় কারও কাছ থেকে আছরাঙ্গা দীঘির ইতিহাস জেনে নিতে পারেন

উপসংহার

আছরাঙ্গা দীঘি শুধু একটি জলাধার নয়, এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ইতিহাসের এক অপূর্ব সমন্বয়। যারা প্রকৃতিপ্রেমী, ইতিহাস অনুসন্ধানী অথবা একটু শান্তিতে সময় কাটাতে চান—তাঁদের জন্য আছরাঙ্গা দীঘি হতে পারে একটি আদর্শ ভ্রমণ গন্তব্য।


https://www.munshiacademy.com/আছরাঙ্গা-দীঘি-ক্ষেতলাল-জ/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *