আকাশ নীল হয় কেন?
– যখন বিজ্ঞান ছুঁয়ে যায় কাব্য
আকাশ—এক রহস্যময় নীল চাদর, যা আমাদের মাথার ওপর প্রতিদিন বিস্তৃত থাকে। কবির চোখে এটি স্বপ্নের রঙ, প্রেমের প্রতীক; আর বিজ্ঞানীর চোখে এটি এক নিখুঁত ব্যাখ্যার ফল। আজ চলুন, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজি দুই চোখে—একদিকে যুক্তি, অন্যদিকে অনুভূতি।
কাব্যিক দৃষ্টিভঙ্গি
“নীল আকাশের পানে চেয়ে,
মন যেন হারায় কোন গানে।”
আকাশের এই নীল রঙ যেন মানব হৃদয়ের প্রশান্তি, কল্পনার ডানা। কবিরা বলেন, নীল রঙ স্বপ্নের, বিস্তারের, ও অনন্ত পথচলার প্রতীক। কিন্তু…
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে
সূর্যের আলো যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন তা সাদা আলো হলেও তা আসলে সাতটি রঙের মিশ্রণ—লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, গাঢ় নীল, বেগুনি।
সূর্যের আলো সাদা আলো হিসেবে দেখা গেলেও, এটি আসলে বিভিন্ন রঙের (wavelength) আলো দিয়ে গঠিত—লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনি প্রভৃতি। এই প্রতিটি রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণভাবে:
লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য: ৬২০–৭৫০ nm
নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য: ৪৫০–৪৯৫ nm
বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য: ৩৮০–৪৫০ nm
রেলি ছায়াচ্ছন্নতা (Rayleigh Scattering)
যখন সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন তা বাতাসে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন অণুর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষের ফলে আলো ছড়িয়ে পড়ে—এটাকেই বলে Rayleigh Scattering।
Rayleigh সূত্র অনুযায়ী ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা ∝
এখানে,
= আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য
অর্থাৎ, যেসব রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম (যেমন: নীল, বেগুনি), তারা বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের চোখ বেগুনি রঙের প্রতি অতটা সংবেদনশীল নয় এবং বায়ুমণ্ডলে কিছু অতিবেগুনি আলো শোষিত হয়। ফলে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো রঙ হিসেবে নীল আলোই সবচেয়ে স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে।
নীল ও বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হওয়ায় তারা বেশি ছড়িয়ে পড়ে।
আমাদের চোখ বেগুনি আলোতে কম সংবেদনশীল
তাই সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয় নীল আলো
সংমিশ্রণের সৌন্দর্য
আকাশের এই নীল রঙ আসলে এক বৈজ্ঞানিক সত্যের কাব্যিক প্রকাশ। এখানে:
বিজ্ঞানের সূত্র:
ছড়িয়ে পড়া ∝
(λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য)
সাহিত্যের ব্যাখ্যা:
“আকাশ নীল, কারণ মানুষের মন তারই দিকে যেতে চায়।”
উপসংহার
আকাশের রঙ তাই শুধু রঙ নয়। এটা এক সঙ্গে বিজ্ঞানীর সূত্র ও কবির স্বপ্ন। নীল আকাশ আমাদের শেখায়—প্রকৃতিকে বুঝতে হলে শুধু গণিত নয়, দরকার কাব্যিক চোখও।