অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধ মূলভাব
প্রবন্ধটির মূলভাব হচ্ছে—সমাজে প্রচলিত ‘অর্ধাঙ্গী’ ধারণা নারীর প্রকৃত মর্যাদাকে খণ্ডিত করে। বেগম রোকেয়া এই প্রবন্ধে যুক্তি ও উদাহরণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, নারী ও পুরুষ উভয়েই সমাজরথের সমান চক্র, তারা পরস্পরের পরিপূরক। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর শিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক নির্ভরতা এবং মানসিক দাসত্বকে কাজে লাগিয়ে নারীর অধিকার হরণ করেছে। লেখিকা নারীকে অর্ধাঙ্গী নয়, সম্পূর্ণ ও স্বাধীন মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তাই তিনি নারীশিক্ষা, আত্মমর্যাদা ও সচেতনতা জাগরণের উপর বিশেষ জোর দেন। ‘অর্ধাঙ্গী’ নয়, নারী হবে পরিপূর্ণ মানবসত্তা—এই বার্তাই প্রবন্ধটির মূলসুর।
এই রচনায় তিনি নারীজাগরণের পক্ষে যে সুচিন্তিত, দৃঢ় ও বলিষ্ঠ মতামত ব্যক্ত করেছেন তাতে তাঁর মন্তব্যে আছে আবেগের গাঢ়তা আর যুক্তিতে আছে তীক্ষ্ণতা। তিনি দেখাতে চেয়েছেন, সমাজজীবনের অগ্রগতি ও কল্যাণসাধনের জন্যে নারীজাগরণ এবং সেই সঙ্গে পুরুষ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই।
অর্ধাঙ্গী প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক , অনুধাবনমূলক ও সৃজনশীল প্রশ্ন নিম্নরূপ
✅ ১. জ্ঞানমূলক প্রশ্ন (৩০টি)
(উত্তরের জন্য পাঠ্যাংশ জানা থাকা আবশ্যক)
- “অর্ধাঙ্গী” প্রবন্ধটির লেখিকা কে?
- “অর্ধাঙ্গী” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ কী?
- বেগম রোকেয়া কোন যুগের লেখিকা ছিলেন?
- “অর্ধাঙ্গী” প্রবন্ধটি কোন ধরনের রচনা?
- ‘রোগ নির্ণয় না করে চিকিৎসা হয় না’ – এই কথার মাধ্যমে লেখিকা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
- রোকেয়া কোন নারীদের “অবলা” বলেছেন?
- পার্সি নারীদের উদাহরণ লেখিকা কেন টেনেছেন?
- লেখিকা কোন দুটি পক্ষের মধ্যে তুলনা করেছেন?
- সীতা-রামের উদাহরণ লেখিকা কীভাবে ব্যবহার করেছেন?
- রোকেয়া নারীদের কি ‘বালিকা’ বলে উল্লেখ করেছেন?
- রোকেয়ার মতে, নারী কীভাবে পুরুষের পূর্ণ সহযোগী হতে পারে?
- লেখিকা কোন গাছটির সঙ্গে স্ত্রীলোককে তুলনা করেছেন?
- ‘গোলাপলতিতে কাঁঠাল ফলে না’—উক্তিটির ব্যাখ্যা কী?
- লেখিকা ‘দর্পণ প্রতিফলন’ রূপক কোথায় ব্যবহার করেছেন?
- নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বলে রোকেয়া মনে করেন?
- “দ্বিচক্র রথ” উপমাটি কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে?
- রোকেয়া কোন দেশীয় ও বিদেশি নারীর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন?
- ‘মানসিক দাসত্ব’ বলতে লেখিকা কী বোঝান?
- লেখিকা নারী শিক্ষার জন্য কী ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
- ‘Better half’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
- রোকেয়া ‘মূর্ত্তিমতী কবিতা’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
- লেখিকা কোন কোন জ্ঞানচর্চার কথা উল্লেখ করেছেন?
- ‘নারী গৃহে মোহরিত’—এই মন্তব্য লেখিকার কোন যুক্তির প্রেক্ষিতে এসেছে?
- লেখিকা নারী উন্নয়নের জন্য কোন ক্ষেত্রগুলিতে জোর দেন?
- রোকেয়া কোন সময়ের মুসলিম নারীদের অবস্থার সমালোচনা করেছেন?
- লেখিকার মতে ‘অর্থনৈতিক নির্ভরতা’ কীভাবে নারীকে দুর্বল করে?
- লেখিকার ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য কী?
- রোকেয়া কোন ধর্মীয় বা পৌরাণিক চরিত্র বিশ্লেষণে এনেছেন?
- লেখিকা সমাজে নারীকে কীভাবে চিত্রিত করেছেন?
- ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের শেষে লেখিকা কোন বার্তা দিয়েছেন?
✅ ২. অনুধাবনমূলক প্রশ্ন (৩০টি)
(বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও উপলব্ধি নির্ভর)
- লেখিকা কেন ‘অর্ধাঙ্গী’ ধারণার বিরোধিতা করেছেন?
- রোকেয়ার মতে, নারী কীভাবে ‘বিকলাঙ্গ সমাজ’-এর অংশ হয়ে উঠেছে?
- নারীর অজ্ঞতা কীভাবে তার দাসত্বের প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে?
- সীতা-রামের উদাহরণ নারীর অবস্থা তুলে ধরতে কীভাবে কার্যকর হয়েছে?
- ‘দ্বিচক্র রথ’ উপমাটি নারীর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে কীভাবে প্রযোজ্য?
- লেখিকা নারী শিক্ষার কোন দিকগুলিতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং কেন?
- মানসিক দাসত্ব নারী উন্নয়নের পথে কীভাবে বাধা সৃষ্টি করে?
- লেখিকার মতে, নারীর স্বাধীনতা কেবল বাহ্যিক পর্দা ত্যাগে সম্ভব নয়—এই বক্তব্যের তাৎপর্য কী?
- নারীকে ‘মূর্ত্তিমতী কবিতা’ বলার মধ্য দিয়ে লেখিকা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
- ‘গোলাপলতিতে কাঁঠাল ফলানো’ উপমার বাস্তবতাসম্মত বিশ্লেষণ দিন।
- নারী-পুরুষের সম্পর্ককে লেখিকা কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
- প্রবন্ধটিতে নারীর অর্থনৈতিক নির্ভরতা কীভাবে চিত্রিত হয়েছে?
- ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে শিক্ষার ধারণা কতটা আধুনিক ও প্রগতিশীল?
- লেখিকা নারীর স্বরূপ গঠনে কী কী জিনিস অন্তর্ভুক্ত করেছেন?
- লেখিকা নারীশিক্ষার গুরুত্বকে সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত করেছেন?
- নারীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে লেখিকা কীভাবে দেখেছেন?
- ‘দর্পণে প্রতিফলিত সমাজ’ বলতে লেখিকা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
- প্রবন্ধে বিদ্রুপ ও ব্যঙ্গ কীভাবে ব্যবহার হয়েছে, উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
- লেখিকা নারীকে কীভাবে সমাজের চালক শক্তি হিসেবে কল্পনা করেছেন?
- রোকেয়ার দৃষ্টিতে ‘গৃহিনী’ হওয়া নারীর একমাত্র পরিচয় হতে পারে কি?
- লেখিকা বলছেন নারীকে শিক্ষা দিয়ে কীভাবে সমাজের কাঠামো বদলানো সম্ভব?
- লেখিকার সমাজ ভাবনায় ‘স্বামী-স্ত্রীর’ সম্পর্কের আদর্শ কী হওয়া উচিত?
- লেখিকা নারীর ‘জীবনদর্শন’-কে কেমন দেখতে চেয়েছেন?
- শিক্ষিত নারীকে লেখিকা কোন ভূমিকায় কল্পনা করেছেন?
- লেখিকা নারীর অবস্থা পরিবর্তনে কাকে দায়ী করছেন বেশি—নারী নিজে না সমাজ?
- লেখিকা নারীর আত্মসম্মান বোধের ঘাটতি কোথায় দেখতে পান?
- সীতা-রামের গল্পে নারীর নীরবতা কীভাবে প্রতীকী হয়েছে?
- প্রবন্ধের ভাষা নারীর অবস্থান ব্যাখ্যায় কতটা উপযুক্ত?
- লেখিকার দৃষ্টিতে ‘প্রকৃত নারীত্ব’ বলতে কী বোঝায়?
- ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে রোকেয়ার নারীবাদী চেতনা কতটা প্রভাবশালী?
✅ ৩. সৃজনশীল প্রশ্ন (৪টি)
(উত্তরের জন্য বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও জীবনঘনিষ্ঠতা প্রয়োজন)
সৃজনশীল প্রশ্ন ১:
তুমি ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধ পাঠ করার পর উপলব্ধি করেছো যে, আজকের সমাজেও অনেক নারী শিক্ষা, অর্থনীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছিয়ে।
(ক) প্রবন্ধ থেকে নারীর দুর্দশার দুটি চিত্র তুলে ধরো।
(খ) বর্তমান সমাজের সঙ্গে প্রবন্ধের বিষয়বস্তুর মিল/অমিল ব্যাখ্যা করো।
(গ) তুমি একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে নারী-উন্নয়নের জন্য তিনটি বাস্তব পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২:
রোকেয়া নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলেছেন। আজও নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিবাহ, শিক্ষার অভাব রয়ে গেছে।
(ক) প্রবন্ধে ব্যবহৃত দুটি রূপক চিহ্নিত করো এবং তার তাৎপর্য লেখো।
(খ) লেখিকার বক্তব্য অনুযায়ী ‘অর্ধাঙ্গী’ ধারণাটি সমাজে কী ক্ষতি করছে, ব্যাখ্যা করো।
(গ) বর্তমান নারী-শিক্ষা প্রসারে তোমার এলাকার একটি উদ্যোগের বিবরণ দিয়ে মূল্যায়ন করো।
আপনার চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্নপত্রটি PDF বা Word ফাইলেও তৈরি করে দিতে পারি—আপনি কি সেটা চান?
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩:
৩. রেণু ও রাজু একই পিতা-মাতার সন্তান। কিন্তু তাদের পিতা-মাতা রাজুকে রেণু অপেক্ষা বেশি আদর-যত্ন করে। দুই ভাইবোন খেতে বসলে বড় ভাগটা রাজু পায়। রাজু কোনো অপরাধ করলে তাদের পিতা-মাতা বেটা ছেলে বলে আমলে নেয় না। রাজুর জন্য গৃহশিক্ষক থাকলেও রেণুর জন্য তা রাখা হয়নি। রেণু যতই বয়ঃপ্রাপ্ত হচ্ছে পিতা-মাতা তার বিয়ে দেওয়ার জন্য ততই ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। এতে রেণু আপত্তি করলে তার মা বলেন, মেয়েদের এত লেখাপড়া শিখে কাজ নেই, বরং ঘর-দোর সাজানো গোছানো, সুয়েটার বুনন এবং রান্না করাটা শিখে নিলে তা কাজে আসবে।
ক. ‘শমস-উল-ওলামা’ অর্থ কী?
খ. ‘স্বামী’র স্থলে ‘অর্ধাঙ্গ’ শব্দটি প্রচলিত হওয়ার যৌক্তিকতা বর্ণনা কর।
গ. অনুচ্ছেদে রেণুর পরিবারে নারীর যে অবস্থাটি ফুটে উঠেছে তা ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘অনুচ্ছেদে রেণুর মায়ের মনোভাব সমকালীন প্রতিক্রিয়াশীল সমাজের মনোভাবেরই সমান্তরাল’-মন্তব্যটি ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪:
৪. শিশির এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। বালিকা বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার খুব শখ থাকলেও সে পারিবারিক শাসন ডিঙিয়ে স্কুলে যেতে পারেনি। মায়ের কাছে সে আরবি বর্ণমালা শিখেছে। এরপর কায়দা শিখে যখনই আমপারা শিখতে শুরু করে তখনই তার বিয়ের প্রস্তাব আসে। তার পিতা-মাতা কালবিলম্ব না করে মেয়ের বিয়ে দেয়। ভাগ্যগুণে শিশির ভালো স্বামী পেয়ে যায়। সে স্বামীর সংসারে থেকে নিজের প্রচেষ্টা ও স্বামীর উৎসাহে বিদ্যা অর্জন করে। তাতে সে সমাজে নারীর হীন অবস্থা বুঝতে পারে। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সে নারীশিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে তার এলাকার নারীদের শিক্ষিত করে তোলে।
ক. ‘অবরোধ প্রথা’ কী?
খ. ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধে লেখক কোন প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘নবদম্পতির প্রেমালাপ’ কবিতাংশটি ব্যবহার করেছেন? বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে শিশিরের পিতৃ-পরিবারে ব্যক্ত নারীর প্রতি মানোভাব ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শিশিরের কাজের মধ্যে ‘অর্ধাঙ্গী’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের ইচ্ছার কি কোনো প্রতিফলন ঘটেছে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।