লুৎফর রহমান রিটন: জীবন ও সাহিত্যকর্ম

Spread the love

লুৎফর রহমান রিটন: জীবন  সাহিত্যকর্ম

✦ জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন:

লুৎফর রহমান রিটন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬১ সালের ১ এপ্রিল, পুরনো ঢাকার ওয়ারী এলাকায়। তিনি একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশি ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক। শৈশব থেকেই লেখালেখির প্রতি অনুরাগ গড়ে ওঠে। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে, এরপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন আবুজর গিফারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৮৯ সালে।


✦ সাহিত্যিক আত্মপ্রকাশ ও অবদান:

লুৎফর রহমান রিটনের সাহিত্যিক আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭০-এর দশকে। তিনি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া ও কবিতা লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার ছড়াগুলো ছিল মজার ছন্দে, বুদ্ধিদীপ্ত ভাষায় এবং শিক্ষণীয় বার্তায় পূর্ণ। তার ছড়া শিশুদের মনে কল্পনার জগৎ খুলে দেয়।


✦ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি:

তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো:

  • ধুত্তুরি (১৯৮২)
  • ঢাকা আমার ঢাকা (১৯৮৪)
  • উপস্থিত সুধীবৃন্দ (১৯৮৪)
  • হিজিবিজি (১৯৮৭)
  • তোমার জন্য (১৯৮৯)
  • ছড়া ও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৯)
  • রাজাকারের ছড়া (১৯৯৯)
  • শেয়ালের পাঠশালা (১৯৯২)
  • নেপথ্য কাহিনী (২০০১)

এসব গ্রন্থে তিনি শুধু কৌতুকপূর্ণ কল্পনা নয়, বরং দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, শিশুদের সচেতনতা এবং শিক্ষামূলক দিকগুলো তুলে ধরেছেন।


✦ কর্মজীবন ও আন্তর্জাতিক ভূমিকা:

২০০০-২০০১ সালে তিনি জাপানে বাংলাদেশের কালচারাল এটাশে হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময় তিনি টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি পদেও ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পরিবারসহ কানাডায় বসবাস শুরু করেন।

তিনি “ছোটদের কাগজ” নামে শিশু-কিশোর পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন, যা শিশুদের সাহিত্যচর্চায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।


✦ সম্মাননা ও পুরস্কার:

লুৎফর রহমান রিটনের সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন অনেকগুলো সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে:

  • সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২)
  • অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২, ১৯৯৬)
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার (১৯৮৪)
  • বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭)
  • একুশে পদক (২০২৪) – এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।

✦ ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা:

রিটন তাঁর লেখায় মাতৃভাষা, সংস্কৃতি ও দেশপ্রেমকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর কবিতা “ফেব্রুয়ারির গান” শহিদদের স্মরণে লিখিত যা শিশুদেরকে মাতৃভাষার ইতিহাস ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলে।


✦ প্রভাব ও উত্তরাধিকার:

লুৎফর রহমান রিটন একজন শিশুমনের ভাষাবিদ। তার ছড়া ও কবিতা শিশুমনের নান্দনিকতা, হাস্যরস এবং বাস্তবতার সংমিশ্রণ। তিনি যে স্বপ্ন ও কল্পনার জগৎ শিশুর জন্য তৈরি করেছেন, তা বাংলা শিশুসাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।


✦ উপসংহার:

লুৎফর রহমান রিটনের সাহিত্যকর্ম শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ নয়, তা দেশের শিশুদের মননে, কল্পনায় এবং শিক্ষায় প্রভাব ফেলেছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে বহু প্রজন্ম পর্যন্ত।


লুৎফর রহমান রিটন: জীবন ও সাহিত্যকর্ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *