kobor kobita- josimuddin, কবর- জসীমউদদীন

কবর কবিতার বিশ্লেষণ: জসীমউদদীনের শোক ও স্মৃতি

Spread the love

📚 কবর কবিতার বিশ্লেষণ: জসীমউদদীনের শোক ও স্মৃতি

📚 ধরন: কবিতা

✍️ লেখক পরিচিতি: জসীমউদদীন

 

নাম: জসীমউদদীন
জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯০৩, ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে
মৃত্যু: ১৩ মার্চ ১৯৭৬

জসীমউদ্দীন ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর, যিনি গ্রামীণ বাংলার জীবন, সংস্কৃতি, মানুষ ও তাদের আবেগ-অনুভূতিকে তুলে এনেছেন সহজ ভাষায়। তাকে বলা হয় ‘পল্লীকবি’, কারণ তার অধিকাংশ কবিতাই পল্লীজীবননির্ভর। তিনি বাংলা সাহিত্যে লোকজ উপাদান, স্নিগ্ধতা, প্রেম ও বেদনার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন।

📚 তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা:

  • কবিতা: ‘নকশীকাঁথার মাঠ’, ‘কবর’, ‘আস্‌ছে শুভদিন’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’
  • গদ্য: ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ জাতীয় লোককাহিনি সংগ্রহেও তিনি অবদান রেখেছেন।

 

🎵 কবিতার ছন্দ ও ছন্দরীতি:

‘কবর’ কবিতাটি প্রধানত মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।

📌 মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য:

  • বাংলা ভাষায় সবচেয়ে প্রচলিত ছন্দ।
  • প্রতিটি চরণে নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে (৮, ১০ বা ১২ মাত্রা বেশি দেখা যায়)।
  • লঘু ও গুরু মাত্রা মিলিয়ে এই ছন্দের গঠন।
  • যতি থাকে ছন্দের গতিপথে।

🧩 উদাহরণ (কবিতার প্রথম চার চরণে মাত্রা গোনো):

এই খানে তোর দাদির কবর | ডালিম গাছের তলে – (১২ মাত্রা)
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি | দুই নয়নের জলে – (১২ মাত্রা)
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু | সোনার মতন মুখ – (১২ মাত্রা)
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে | কেঁদে ভাসাইত বুক – (১২ মাত্রা)

এখানে প্রতি চরণে ১২ মাত্রা করে আছে এবং ছন্দ চলেছে মাত্রাবৃত্ত নিয়মে, যেখানে কথার ছন্দ ধ্বনির দোলায়িততায় একটানা চলে।

🎯 সংক্ষেপে ছন্দ বিশ্লেষণ:

  • ছন্দের ধরণ: মাত্রাবৃত্ত
  • মাত্রা সংখ্যা: সাধারণত প্রতি চরণে ১২ মাত্রা
  • ছন্দের প্রকৃতি: গীতিকবিতা ও আখ্যানমূলক গঠন
  • ছন্দে গ্রামীণ শব্দ, সহজ সরল বাক্য এবং তালযুক্ত গতি আছে যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

📝কবর কবিতার সারাংশ:

কবর’ কবিতাটি এক বৃদ্ধ পিতার আত্মকথনের মাধ্যমে তার প্রিয়জনদের মৃত্যুকাহিনি এবং দুঃখময় স্মৃতিচারণার নিদারুণ বিবরণ। তিনি তার নাতিকে নিয়ে কবরস্থানে ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন — তার স্ত্রী, সন্তান, কন্যা, ভাইবোন, এমনকি ছোট্ট ফুপুটির কবর — এবং প্রতিটি মৃত্যুই তার জীবনে একেকটি গাঢ় ক্ষতের মতো বসে আছে। জীবনের সকল ভালোবাসা, স্বপ্ন, আশা, সম্পর্ক – সবকিছুই একে একে মৃত্যুর অতলে তলিয়ে গেছে। এই কবিতা কেবল মৃতদের কথা নয়, বেঁচে থাকা এক পিতার হাহাকার, এক বিধ্বস্ত কৃষকের আত্মবিনাশী যন্ত্রণা।

🎯 মূলভাব:

‘কবর’ কবিতার কেন্দ্রীয় ভাব প্রেম, মৃত্যু ও স্মৃতির সমাহার। জসীমউদ্দীন এখানে মাটির প্রতি গ্রাম্যমানুষের আবেগ, প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা, এবং জীবন-মৃত্যুর অসহায় চক্রকে অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী করে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতায় মৃত্যুর সাথে জীবন এমনভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যে, জীবনের প্রত্যেকটি বাঁকেই বেদনার ছায়া।

🔍 বিশ্লেষণ:

🔹 ভাষা ও শৈলী:

  • কবিতাটি গীতিকবিতার আদলে লেখা, সরল অথচ ব্যঞ্জনাময়।

  • গ্রামীণ বাংলার লোকজ শব্দ, উপমা ও রূপক ব্যবহারে জসীমউদ্দীন স্বতন্ত্র।

  • “নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া…”, “জোনকি মেয়েরা সারারাত জাগে” – এমন চিত্রকল্প পাঠককে একেবারে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়।

🔹 কবির জীবনদর্শন:

  • মৃত্যু কবির কাছে শুধুই দেহান্ত নয়, এটি প্রেমের, সংসারের, সম্পর্কের অবসান।

  • কবি বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পরও মৃতদের স্মৃতি জীবিতদের হৃদয়ে জীবন্ত থাকে – যেমন “পরাণের ব্যথা মরে নাকো, সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।”

🔹 মানবিকতা ও অনুভূতি:

  • প্রতিটি কবরের পেছনে একটি গভীর মানবিক গল্প আছে — শিশুর মৃত্যু, গৃহবধূর নিপীড়ন, পিতার কষ্ট ইত্যাদি।

  • “দাদু! ধর ধর, বুক ফেটে যায়…” – এই পঙ্‌ক্তি বোঝায়, জীবিত মানুষের মনে কতখানি যন্ত্রণা জমা হতে পারে।

📚 শিক্ষামূল্য ও প্রাসঙ্গিকতা:

  • ছাত্রদের মধ্যে সহানুভূতি, মানবিকতা ও পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব বোঝাতে এই কবিতা অতুলনীয়।

  • এটি গ্রামীণ সংস্কৃতি, মানুষের জীবনচক্র, সামাজিক বেদনা ও প্রান্তিক মানুষের ভাষা তুলে ধরে, যা বাংলা সাহিত্যে এক মূল্যবান সংযোজন।

📝 সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. ‘কবর’ কবিতায় দাদু তার নাতিকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল?
উত্তর: দাদু তার নাতিকে কবরস্থানে নিয়ে গিয়েছিল।

২. দাদু কেন কাঁদছিল?
উত্তর: দাদু তার পরিবারের প্রিয়জনদের মৃত্যু ও স্মৃতিচারণ করে ব্যথিত হয়ে কাঁদছিল।

৩. দাদির কবর কোথায়?
উত্তর: দাদির কবর ডালিম গাছের নিচে।

  1. কবিতায় “জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর” কথার মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?
    উত্তর: এতে মৃত স্বজনদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনার আহ্বান বোঝানো হয়েছে।

৫. ‘শত কাফনের, শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি’ — এখানে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: কবি বহু প্রিয়জনের মৃত্যুতে হৃদয়ে গভীর শোক ও বেদনার স্মৃতি বহন করছেন।

🔹 অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১. ‘কবর’ কবিতার কবি কে?
জসীমউদ্দীন

২. ‘কবর’ কবিতার ছন্দ কী?
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ

৩. দাদির কবর কোথায়?
ডালিম গাছের নিচে

৪. দাদু কাদের কথা স্মরণ করেছেন?
স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, বোন ও নাতনির

৫. ‘কবর’ কবিতা কোন কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত?
নকশীকাঁথার মাঠ (নৈর্ব্যক্তিক গ্রন্থ নয়)

৬. কবিতায় কোন ঋতুর উল্লেখ রয়েছে?
ফাল্গুন

৭. কবিতায় “জোনকি মেয়েরা সারারাত জাগে” — কাদের বোঝানো হয়েছে?
জোনাকি পোকারা

✍️ রচনামূলক প্রশ্ন

১. ‘কবর’ কবিতায় গ্রামীণ জীবনের বেদনা ও ভালোবাসার চিত্র ফুটে উঠেছে — বিশ্লেষণ কর।

২. ‘কবর’ কবিতায় কবি শোক ও স্মৃতিকে যেভাবে ব্যঞ্জনাময়ভাবে তুলে ধরেছেন — তা ব্যাখ্যা কর।

৩. ‘কবর’ কবিতায় দাদুর চরিত্র একটি জীবন্ত স্মারক — ব্যাখ্যা কর।

৪. ‘কবর’ কবিতায় মৃত্যুব্যথার মধ্য দিয়ে মানবজীবনের বাস্তব রূপ তুলে ধরা হয়েছে — আলোচনা কর।

 

কবর কবিতার বিশ্লেষণ: জসীমউদ্দীনের শোক ও স্মৃতি

 

কবিতাটি বিশ্লেষণের জন্য নিচের ভিডিওটি দেখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *