✅ ‘ইদ’ বনাম ‘ঈদ’—সঠিক বানান কোনটি?
বাংলা ভাষায় ‘ইদ’ ও ‘ঈদ’—দুই ধরনের বানানই দেখা যায়। তবে কোনটি শুদ্ধ, আর কোনটি প্রচলিত কিন্তু অগ্রহণযোগ্য—এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান ও বাংলা বানানরীতি অনুযায়ী সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
🔹 শব্দের উৎস:
‘ইদ’ শব্দটি আরবি ভাষা থেকে আগত। আরবি ‘عيد’ (ʿĪd) শব্দের অর্থ উৎসব বা পর্যাবৃত্ত আনন্দের দিন। ইসলাম ধর্মে দুইটি প্রধান উৎসব রয়েছে—ইদুল ফিতর ও ইদুল আযহা। এই দুটি উৎসব বাংলা ভাষায়ও ‘ইদ’ নামে পরিচিত।
🔹 বাংলা একাডেমির নির্দেশনা:
বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধান ও বাংলা বানানরীতি অনুসারে:
বিদেশি (বিশেষত আরবি, ফারসি, ইংরেজি) শব্দ বাংলায় রূপান্তরের সময় সাধারণত সংক্ষিপ্ত স্বরধ্বনি ব্যবহার করা হয়।
তাই আরবি থেকে আগত শব্দ যখন বাংলায় গৃহীত হয়, তখন ‘ঈ’ নয় বরং ‘ই’ ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
🔸 উদাহরণ:
ইদ (ঈদ ❌)
ইমান (ঈমান ❌)
ইলম (ঈলম ❌)
ইবাদত (ঈবাদত ❌)
🔹 ‘ঈদ’ কেন প্রচলিত?
‘ঈদ’ বানানটি বাংলাভাষায় দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় ও আবেগপ্রবণ প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, ফলে এটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সংবাদপত্র, বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সাহিত্যেও এটি বহুল প্রচলিত। তবে প্রচলিত হলেই যে তা শুদ্ধ, এমন নয়।
—
🔹 চূড়ান্ত মত:
✅ শুদ্ধ ও প্রামাণ্য বানান: ইদ
❌ প্রচলিত কিন্তু শুদ্ধ নয়: ঈদ
বাংলা একাডেমির মান্যতা অনুসারে, লেখ্য বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে “ইদ” শব্দটিই ব্যবহার করা উচিত।
🔹 শিক্ষার্থীদের জন্য উপদেশ:
ভাষা ব্যবহার যখন প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা পরীক্ষাভিত্তিক হয়, তখন শুদ্ধ বানান অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। তাই “ইদ” শব্দটি সঠিকভাবে ব্যবহার করে ভাষাচর্চার শুদ্ধতা বজায় রাখা শ্রেয়।
📚 তথ্যসূত্র:
1. বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান
2. বাংলা একাডেমির বাংলা বানানরীতি (সর্বশেষ সংস্করণ)
3. আরবি-বাংলা অভিধান
4. প্রাসঙ্গিক ভাষাতাত্ত্বিক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ
বাংলা ভাষার শুদ্ধ বানানচর্চা ও ভাষাগত শৃঙ্খলার জন্য ‘ইদ’ শব্দের ব্যবহারই গ্রহণযোগ্য। ‘ঈদ’ বানানটি আবেগনির্ভর ও প্রচলিত হলেও এটি প্রামাণ্য নয়। অতএব, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাঙ্গনে ‘ইদ’ বানানটিই ব্যবহার করা উচিত।