আব্দুস সাত্তার খান: আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

Spread the love

🧪 আব্দুস সাত্তার খান: আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

(Dr. Abdus Sattar Khan: Discoveries and Contributions)


🔷 ভূমিকা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এমন এক ক্ষেত্র যেখানে মানুষের সৃজনশীলতা ও জ্ঞান বিশ্ববাসীর কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. আব্দুস সাত্তার খান এমনই একজন প্রতিভাবান উদ্ভাবক, যিনি নাসা-সহ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা গবেষণায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন—বাংলাদেশের সন্তানরাও বিশ্বের সর্বোচ্চ গবেষণাগারে নেতৃত্ব দিতে পারে।


🔷 জন্ম ও শৈশব

ড. আব্দুস সাত্তার খান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪১ সালে, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার (বর্তমানে ঠাকুরগাঁও) চরগাঁও গ্রামে। শৈশবকাল থেকেই তিনি ছিলেন কৌতূহলী ও প্রখর বুদ্ধির অধিকারী। গ্রামের স্কুলেই তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু হয়। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল, যা পরবর্তীতে তাঁর ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


🔷 শিক্ষাজীবন ও প্রাথমিক অর্জন

  • মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ভর্তি হন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে RUET)
  • পরবর্তীতে জার্মানিতে যান উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখান থেকে তিনি মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি (PhD) অর্জন করেন।
  • তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল উচ্চতাপ সহিষ্ণু ধাতব যৌগ (heat-resistant metal alloys)

🔷 কর্মজীবন ও আবিষ্কার

ড. সাত্তার খানের গবেষণা ও আবিষ্কারের মূল ক্ষেত্র ছিল উচ্চতাপ নিরোধক পদার্থ (Thermal Protection Materials)জ্বালানির বিকল্প প্রযুক্তি (Alternative Fuels)

🚀 ১. নাসা ও মহাকাশ গবেষণা

তিনি NASA ও US Air Force-এ প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং:

  • রকেট ও মহাকাশযানের থার্মাল শিল্ড বা তাপরোধক স্তর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন
  • তাঁর উদ্ভাবিত যৌগিক ধাতু (composite alloy) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশকালে স্পেস শাটলের উচ্চতাপ সহনশীলতা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হয়
  • নাসার মহাকাশ গবেষণায় ‘heat-resistant lightweight ceramic composite’ আবিষ্কারে তাঁর নাম যুক্ত হয়

⛽ ২. জ্বালানি প্রযুক্তি

তিনি এমন একটি অ্যাডভান্সড ফুয়েল তৈরি করেন যা প্রচলিত জ্বালানির তুলনায় পরিবেশবান্ধব ও কার্যকর, যা সামরিক বিমান ও রকেটে ব্যবহারযোগ্য। এটি অল্টারনেটিভ ফুয়েল ডেভেলপমেন্ট খাতে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন।


🔷 আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

  • তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ (Department of Defense), NASA, এবং Boeing-এর সঙ্গে যৌথভাবে বহু গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন
  • তাঁর নামে রয়েছে ১০০টিরও বেশি গবেষণা পত্র ও প্রযুক্তি পেটেন্ট, যেগুলো মূলত আমেরিকার ডিফেন্স ও অ্যারোস্পেস টেকনোলজিতে ব্যবহৃত হয়েছে
  • তিনি ছিলেন US National Research Council Fellow এবং American Institute of Aeronautics and Astronautics (AIAA)-এর সদস্য

🔷 বাংলাদেশে অবদান

প্রবাসে থেকেও তিনি তাঁর দেশের জন্য কাজ করতে চান। তিনি বাংলাদেশে উচ্চপ্রযুক্তি শিল্প স্থাপনরকেট ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণার পরিকল্পনা করেছিলেন।
তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে যেখানে বিজ্ঞানমনস্ক তরুণেরা কাজ করতে পারবে।


🔷 ব্যক্তিত্ব ও অনুপ্রেরণা

ড. সাত্তার খান ছিলেন নিরহংকারী, সৎ ও নিঃস্বার্থচেতা একজন বিজ্ঞানী। তিনি কখনোই প্রচারের আলো চাননি বরং নিরবেই কাজ করে গেছেন বিশ্বমানের উদ্ভাবক হিসেবে।
তাঁর জীবন প্রমাণ করে—“প্রতিভা যদি পরিশ্রম ও ধৈর্যের সাথে যুক্ত হয়, তবে সীমানা বলে কিছু থাকে না।”


🔷 মৃত্যু

ড. আব্দুস সাত্তার খান ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তাঁর কর্ম ও অবদান চিরকাল বিজ্ঞান জগতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।


🔷 উপসংহার

ড. আব্দুস সাত্তার খান ছিলেন এমন একজন বিজ্ঞানী যিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বের বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অনবদ্য অবদান রেখেছেন। তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন—বাংলাদেশের প্রতিভা বৈশ্বিক মানচিত্রে কতটা উজ্জ্বলভাবে স্থান করে নিতে পারে।

“He built the shields that protect space shuttles—and gave Bangladesh a name among the stars.”


📚 তথ্যসূত্র:

  1. NASA Technical Reports Archive
  2. American Institute of Aeronautics & Astronautics (AIAA)
  3. The Daily Star & Prothom Alo Archives
  4. Patent US & ResearchGate
  5. ‘Scientist from Bangladesh helps NASA shield spacecrafts’, USA News Bulletin, 2005

আব্দুস সাত্তার খান: আবিষ্কার ও কর্মযজ্ঞ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *